ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি।এবার দাম বৃদ্ধির দৌড়ে শামিল হলো পানি। শেষ পর্যন্ত পানির দামেও লেগেছে আগুন। বাজারে বোতলজাত এবং জারে বিক্রি হওয়া সব ব্র্যান্ডের পানির দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। শুধু তাই নয়, পানির সঙ্গে কোল্ড ড্রিঙ্কস-সফট ড্রিঙ্কসেরও দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ বিশেষ করে, রিকশাচালক, কুলি-মজুর, বিভিন্ন কাজে যারা দিনের অধিকাংশ সময় ঘরের বাইরে থাকেন- এ ধরনের মানুষের কষ্ট বাড়বে। এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, ‘পণ্যমূল্য নিয়ে মানুষের কষ্টের সীমা নেই। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। এর মধ্যে যদি পানিরও দাম বাড়ানো হয় তাহলে মানুষ কোথায় যাবে, কী করবে। পানির দাম বাড়ানো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। পানির দাম কেন বাড়বে। পানিও কি আমদানি করতে হয় নাকি। আসলে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে গেছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, পণ্যমূল্যের জাঁতাকলে দেশের মানুষ পিষ্ট হলেও, মানুষ সীমাহীন কষ্ট পেলেও সরকার এগুলো আমলে নিচ্ছে না। এতে সব ধরনের এবং সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাটাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’
বাজার এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের কৌশল নিয়েছেন। ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা যেমন দাম বাড়ানোর আগে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেন এবং কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা সপ্তাহখানেক আগে থেকে দোকানে দোকানে বলে যান যে, এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বাড়ানো হবে তেলের। পানির ব্যবসায়ীরাও ঠিক একই কৌশল নিয়েছেন। সপ্তাহখানেক আগে থেকে বাজারে বোতলজাত পানির সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় কোম্পানির লোকজন জানিয়ে দেন, পানির দাম বাড়বে। ঠিকই এক সপ্তাহের মধ্যে বোতলজাত প্রায় সব ব্র্যান্ডের পানির দাম বেড়ে গেছে বাজারে।
এক সপ্তাহ আগে পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেডের ‘মাম’ ব্র্যান্ডের এক লিটার পানির দাম ছিল ২০ টাকা। পাঁচ টাকা বেড়ে এখন হয়েছে ২৫ টাকা। দুই লিটার ৩০ টাকার বদলে হয়েছে ৩৫ টাকা। আর ৫ লিটারের বড় বোতল ৭৫ টাকার বদলে হয়েছে ৮০ টাকা। তবে তাদের ৫০০ মিলি বোতলের দাম বাড়ানো হয়নি। এটি আগের দাম ১৫ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে আরেক বড় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের পানিরও দাম বাড়ানো হয়েছে। ফ্রেশ ব্র্যান্ডেরও ১ লিটার ২০ টাকা থেকে হয়েছে ২৫ টাকা, ২ লিটার ৩০ টাকা থেকে হয়েছে ৩৫ টাকা এবং ৫ লিটার ৭৫ টাকার বদলে হয়েছে ৮০ টাকা।
ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড একুয়াফিনার এক লিটারে ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগের দাম ছিল ২০ টাকা, এখন হয়েছে ২২ টাকা। এ ছাড়া দি একমি অ্যাগ্রোভেট অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ‘একমি’ ব্র্যান্ডের এ লিটারে দাম বাড়িয়ে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে কনফিডেন্স, রিভেরা, জীবন, প্রাণ ড্রিঙ্কিং ওয়াটার, কিনলেসহ বাজারের বড় বড় সব ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, দেশে বোতলজাত পানি উৎপাদন ও বিপণনের জন্য বিএসটিআই থেকে লাইসেন্স নিয়েছে মোট ১৭৩টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মাম, ফ্রেশ, প্রাণ, কিনলে, একুয়াফিনারের মতো ৫ থেকে ৬টি ব্র্যান্ডের পানিই বেশি বিক্রি হয়। এর বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং জেলা পর্যায়ে কিছু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বোতলজাত পানি উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সবগুলো ব্র্যান্ডের পানিরই দাম বাড়ানো হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির ব্যাখ্যা :
হঠাৎ পানির দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয় কোম্পানিগুলোর ডিলার ও কর্মকর্তাদের কাছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত মাম পানির ডিলার অঙ্কুর ট্রেডার্সের মালিক মো. নাসির সময়ের আলোকে বলেন, মূলত গত ১ জুন থেকে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে কোম্পানির তরফ থেকে। সেই বর্ধিত মূল্যের পানি এখন বাজারে চলে এসেছে। কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পানির দাম বাড়ানো হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেডের কারওয়ান বাজার এলাকার বিক্রয় কর্মকর্তা কবীর হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, একদিকে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, অপরদিকে নতুন বাজেটে পানি শোধনের যে ফিল্টার আমদানি করা হয় তার শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। মূলত এই দুই কারণে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।
পানির বাজার পরিস্থিতি :
বর্তমানে দেশে বোতলজাত পানির ব্যবসায় প্রায় ১৭৩টি প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকলেও বাজারে প্রতিযোগিতা করছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। এরা সারা দেশে প্রতিদিন ৩ লাখ লিটারেরও বেশি বোতলজাত পানি বিক্রি করে। অর্থাৎ বছরে ১২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শুধু বোতলজাত পানিই বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে আছে জারভর্তি পানির ব্যবসা। এখন সারা দেশে প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি অফিস এমনকি শহর এলাকার অনেক বাসায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে জারের পানি। এখানেও বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে।
খবর: সময়ের আলো