নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘বাজার মূল্য ও পণ্য মান দুটিই বিবেচনায় রেখে ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া সরকারের কাম্য।’
পণ্যের দাম বাড়লেই সরকারের সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভার্চুয়াল জেলা, উপজেলা প্রতিনিধি সম্মেলন- ২০২২ ও ক্যাবের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘ভোক্তাকণ্ঠ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। পরে তপন কান্তি ঘোষ প্রধান অতিথির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, ‘দাম বাড়লেই দেখি অনেকে সরকারের সমালোচনা করেন। আমাদের আমদানি নির্ভর বাজারে অনেক কিছু বিবেচনা করেই পণ্যের দাম নির্ধারণ হয়। ভোক্তারা সবসময় দামে কম কিন্তু মানে ভালো পণ্য চান। দুটো সবসময় একসঙ্গে হয় না।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান।
গেষ্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ও নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, যুগ্ম সম্পাদক ডা. মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান।
এ সময় ক্যাবের সারাদেশের জেলা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘শুধু বাজার সুবিধা থাকলে হবে না, যখন আমরা পণ্যের মান ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক বাজরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাজার পরিচালনা করতে যাই, তখন দাম বাড়তে পারে। এটা ভোক্তাদের বুঝতে হবে। একটা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের সব দিকে নজর রাখতে হয়। অনেক সময় পণ্য আসতে দীর্ঘ সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যায়। তখন চাইলেও হুট করে কমানো যায় না। এ জন্য দাম বাড়লেই অনেকে অনেক কথা বলেন, সরকারের সমালোচনা করেন। দাম বাড়লেই কিন্তু সরকারের সমালোচনা করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার শক্তিশালীকরণ একটি ব্যাপক ধারণা। এটির আইন আছে, অধিদফতর আছে। তারা নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ করছে। একটা ঘটনা ঘটে গেলে তা ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু ভোক্তা অধিকার হচ্ছে এমন, যেসব বিষয় আমাদের ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়ে সেগুলোর দিকে নজর রাখা। এ জন্য আমাদের আরও ব্যাপক কাজ করতে হবে। যদি আমাদের ব্যবসায়ীরা ভেজাল না দেন, মূল্য সঠিক রাখেন। তাহলে তো এসব অধিদফতরকে কাজ করতে হয় না।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন, আমরা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারছি কি না। আমরা স্বাধীন ভাবেই কাজ করতে পারছি। ক্যাবসহ সবাই যেভাবে ভোক্তা অধিকারকে বার বার সামনে আনছেন, আমাদের কাজের ক্ষেত্রে আরও বেশি সুবিধা হচ্ছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এট অব্যাহত থাকবে। ক্যাবকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সে দিকে আরও পরিকল্পনা করা দরকার। আমরা একসঙ্গে কাজ করলে ভোক্তাদের অধিকার আরও রক্ষা করতে পারবো।’
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমাদের জাতীয় ভাবে মাথাপিছু আয় বাড়লেও করোনা পরবর্তী নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আয় কমেছে এবং উচ্চবিত্তের বেড়েছে। বিষয়টির দিকে নজর দিতে আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক দেশেই জিডিপি কমেছে। বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধির ফল যেন সাধারণ মানুষ পায়। কারণ উচ্চবিত্তের প্রবৃদ্ধি বাড়বে আর সাধারণ মানুষ অল্প কিছু পাবে, তা সামঞ্জস্য নয়। সরকারকে এ ব্যাপারে সুনজর দেওয়ার অনুরোধ করছি, যাতে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের আয়ের জায়গা বাড়ে।’
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে জেলা ও উপজেলা কমিটির সদস্যরা সাংগঠনিক ও ক্যাবের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন।