নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২২-২৩ অর্থ বাজেটে ব্যাবসায়ীদের স্বার্থ থাকলেও ভোক্তাদের স্বার্থ লুণ্ঠন করা হয়েছে বলে মনে করেন কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এম শামসুল আলম। তাই বাজেটে ভোক্তাদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানান ক্যাবের এ জ্বালানি উপদেষ্টা।
রোববার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টাল ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কতৃক ‘২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন ক্যাবের এ জ্বালানি উপদেষ্টা ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং সংলাপের মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
বক্তব্যে শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা ধরে নিচ্ছি এ বাজেট ব্যাবসায়ী বান্ধব হয়েছে। তাহলে বাজেট কী ভোক্তা-বান্ধব করা যেত না? প্রজাতন্ত্রের দেশ হিসাবে সেই বিষয়টা আসতে পারে কি না- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি জানান, বাজেটে ভোক্তা স্বার্থ লুন্ঠিত হয়েছে।
এসময়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘দেশে আমদানিকৃত জ্বালানী বেড়ে যাচ্ছে, আমরা আমদানি নির্ভরতা বাড়িয়ে ফেলছি। তাই আমদানি খরচ বাড়লে বিদ্যুৎ- জ্বালানির দাম বাড়বে- সবাই সেই কথা বলছে। কিন্তু আপনারা কেউ কী খেয়াল করেছেন- এই সেক্টরে কতোটা লুন্ঠন মূলক ব্যায় করা হচ্ছে। আর সেই ব্যায়কে আইনের দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে। যদি এ বিষয়টি সুরক্ষিত না করা হতো তাহলে কী হতো- সে বিষয় বিশ্লেষণ করা জরুরি। কিন্তু সেই বিষয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করছে না।’
তিনি আরো বলেন, সরকার সবার জন্য বিদ্যুৎ সেবা দিয়েছে, যা একটি বড় সফলতা। কিন্তু এই বিষয়টি কে দয়া করে বিতর্কিত করবেন না। এটা একটা গৌরব যে, আপনারা জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে পেরেছেন। তবে সেখানে কতো কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।’
বিদ্যুৎ সরকার শতভাগ বাণিজ্যিক ভাবে পরিচালনা করছে। তাতে ভ্যাট, ট্যাক্স, সরকারী কোম্পানির মুনাফা যোগ করে সেই দাম আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে।
শামসুল আলম বলেন, সরকারের পলিসির কারণে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে আরইবির ( বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড) কাছে কম দামে বিতরণ করছে। সেখানে ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি দিতে হচ্ছে। তাহলে এ ঘাটতি আসবে কোথায় থেকে।
এসময় তিনি বলেন, যদি ‘আমাদের মৌলিক অধিকার ব্যাখ্যা করি। তাহলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অধিকারের বিশ্লেষণ মতে, সঠিক দামে, সঠিক মানে এবং সঠিক মাপে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সেবা পাওয়া। কিন্তু আমরা কী তা পাচ্ছি? অবশ্যই পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে যে দাম নির্ধারন করা হয় তা কী সঠিক? নিঃসন্দেহে তা সঠিক নয়। তাহলে যা অযৌক্তিক এবং সঠিক নয় তা কেন আমাদের দিতে হবে?’
ক্যাবের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, এবারের গণশুনানিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) একটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০১৫ সালে ৮ হাজার কোটি টাকা পেন্ডিং ইনভারনমেন্ট ( বকেয়া) রয়েছে, যা এখন ৪০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। তাহলে এই ঘাটতি কে বহন করবে? ক্যাব থেকে আমরা যদি ভূল কোন তথ্য দিয়ে থাকি তাহলে এখানে বিদ্যুতের ডিজি (মহাপরিচালক) রয়েছে, তারা যেন এ বিষয়ে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দেয়।
এ সময়ে তিনি বলেন, (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুণ্ঠন মূলক ব্যায় নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে) এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ১১ দফা এবং গ্যাস খাতে ২৫ দফা দাবি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন প্রতিকার হয় নাই।আমলারা যদি ক্ষমতার অপব্যাবহার করে, তাহলে কি করার থাকে।’
এছাড়াও বিইআরসি তাদের (আমলাদের) আগ্রাবহ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন ভোক্তাদের দাবি নিয়ে কাজ করা বৃহৎ সংগঠন ক্যাবের সিনিয়র এ কর্মী।
এসময় আরো উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ বিভাগের প্রফেসর ড. এম তামিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-ত্বত্ত বিভাগের (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক বদরুল ইমাম। বিদ্যুৎ বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসর এসোসিয়েশনের সভাপতি ইমাম করিম প্রমুখ।
বক্তব্যে তারা আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদনের বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানান। এছাড়াও সিলেটের টেংরাটিলা গ্যাস ক্ষেত্র থেকে দ্রুত গ্যাস উত্তলন এবং সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। কারণ তারা মনে করেন, দেশের সম্পদের সঠিক উৎপাদন ও বন্টন হলে আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।