ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: গোলাম রহমান। বর্তমানে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
(ক্যাব)- এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বানিজ্য মন্ত্রনালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সালে সরকারি চাকুরিতে যোগ দানের পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অধ্যাপনা করেন গোলাম রহমান। ২০০৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গোলাম রহমানকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে। তিনি ২০০৯ সালে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালের
অগাস্টে ক্যাব সভাপতি নির্বাচিত হন গোলাম রহমান।
সম্প্রতি ভোক্তাকণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, ভোক্তাদের অধিকার ও ভোক্তা-অধিকার আইন নিয়ে কথা বলেছেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ রিয়াল।
ভোক্তা ও পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
ভোক্তাকণ্ঠ: বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কেমন দেখছেন? এই পরিস্থিতি সব শ্রেণীর ভোক্তাদের জন্য উপযোগী কি না?
গোলাম রহমান: করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী একটা মুদ্রাস্ফীতি চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এটাকে উস্কে দিয়েছে। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অনেক কিছু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যেমন- ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর, ডালসহ অন্যান্য আরও পণ্য। সাম্প্রতিককালে যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো কোনো পণ্যের বিশেষ করে ভোজ্যতেলের মূল্য পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আবার অন্যদিকে টাকা ও ডলারের যে বিনিময় হারের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেড় বছর আগে যেখানে এক ডলার সমান ৮৫-৮৭ টাকা ছিল, সেটা এখন ১০৫-১১০ টাকা। তাই আমদানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
পণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি নাভিশ্বাস, শ্বাস-রুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মানুষ বিপাকে আছে। সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে, ধার কর্জ করে অনেকে চলছে। অনেকে কম খাচ্ছে, কম পড়ছে। প্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাট করে জীবনধারণ করছে। সরকারও স্বীকার করছে। বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন পণ্যের যে দরপতন হয়েছে, তার সুফল কিন্তু টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বাংলাদেশের ভোক্তারা পাচ্ছেন না। এটা হলো একটা
দিক। এখন বিশ্বজুড়েই মুদ্রাস্ফীতি। বাংলাদেশে অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত। স্বাভাবিক ভাবেই বৈশ্বিক প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত হতে পারছি না। এটা সত্যি। আবার বৈশ্বিক পরিস্থিতি যাতে বাংলাদেশে খুব বিরুপ প্রভাব না ফেলে সে জন্য মুদ্রানীতি এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা বা নীতিতে যে ধরনের পদক্ষেপ অন্যান্য দেশ নিচ্ছে, বাংলাদেশে তেমন উদ্যোগ আমরা খুব দেখছি না। বিশ্বজুড়েই ইন্টারেষ্ট
পলিসি মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা এখন পর্যন্ত করা হচ্ছে না। আবার সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অধিক ঋণ গ্রহণ করলে বাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়ে যায়। সেটাও মুদ্রাস্ফীতিকে উস্কে দেয়। সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে এবং তার বিরুপ প্রভাব মুদ্রাস্ফীতিতে পড়ছে বলে মনে হয়। সবকিছু মিলিয়ে মুদ্রাস্ফীতির যে ঊর্ধ্বগতি, সরকারই স্বীকার করছে তা সাড়ে নয় শতাংশের বেশি। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেসব নিত্যপণ্য ব্যবহার করে সেগুলোর মূল্য বৃদ্ধি তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, পণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি নাভিশ্বাস, শ্বাস-রুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মানুষ বিপাকে পড়েছে। সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে, ধার কর্জ করে অনেকে চলছে। অনেকে কম খাচ্ছে,
কম পরছে। প্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাট করে জীবনধারণ করছে। এটা কিন্তু সরকারও স্বীকার করছে। সরকার এক কোটি মানুষকে টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে কিছু পণ্য বিক্রি করছে। তাতে সেইসব পরিবার বা পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু দেশের যে ১৭ কোটি মানুষ বা তার চেয়ে বেশি তাদের মধ্যে আরও কয়েক কোটি মানুষের আয়-রোজগার সীমিত বিধায় তারা খুবই বিপাকে আছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: সম্প্রতি ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে- কারণ কী বলে মনে করছেন?
গোলাম রহমান: বাংলাদেশের অর্থনীতির দর্শন মুক্তবাজার অর্থনীতি। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোনো ব্যবসায়ী তার আমদানি মূল্য বা উৎপাদন মূল্যের কম মূল্যে কোনো পণ্য বিক্রি করবে আশা করা যায় না। সরবরাহ মূল্য আমদানি মূল্য বা উৎপাদন ব্যয় থেকে বেশি হতে হবে। আবার বাজারে যে সরবরাহ, যেটাকে আমরা বলি সাপ্লাই চেইন, এটা যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকে, তাও দেখতে হবে। আর যুক্তিসঙ্গত মূল্যে তখনই ভোক্তা পণ্য ক্রয় করতে পারে যখন বাজারে প্রতিযোগিতা থাকে। দূর্ভাগ্যবশত আমাদের এখানে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রিফাইনার, উৎপাদন
অথবা আমদানিকারকের সংখ্যা খুব কম। বাজারের উপরে তাদের যে প্রভাব তা অত্যন্ত বেশি। সেই প্রভাবটা কাজে লাগিয়ে অনেক সময় সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে অনেক পণ্যের মূল্য হঠাৎ হঠাৎ বৃদ্ধি করা হয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু বাস্তবতা। আর সবশ্রেণীর ব্যবসায়ীর মধ্যেই অতি মুনাফা অর্জনের একটা প্রবণতা আছে বলে মনে হয়। সেই অতি মুনাফা অর্জনের প্রবণতা থেকে মুদ্রাস্ফীতি বা পণ্য মূল্য যুক্তিসঙ্গত থেকেও বেশি বাড়ছে বলে আমার ধারণা।
ভোক্তাকণ্ঠ: এ পর্যন্ত সরকার বা অন্যান্য সরকারি সংস্থার পণ্যের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা তার বেশির ভাগই মানেননি, নিজেদের ইচ্ছেমতো ভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের এই যে না মানার প্রবণতাগুলো কেন?
গোলাম রহমান: মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণকরা অত্যন্ত কঠিন। যদি সরকার দাম বেঁধে নিজ উদ্যোগে সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা নিলেই কেবল এই নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হতো। কিন্তু সরবরাহের চাবিকাঠি হলো ব্যবসায়ীর হাতে। তার ফিলোসফিই হলো প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ লাভ করা। এখন এই লাভ করতে গিয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য যদি সুবিধাজনক না হয় তাহলে সেই মূল্যে বাজারে পণ্য বিক্রি হবে এই ধারনা বাস্তব সঠিক না। সে জন্য আমরা দেখছি সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য পাওয়া যায় না। যখন সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয় তখন কিন্তু নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যেও পণ্য বিক্রি হয়।
ভোক্তাকণ্ঠ: আমরা অনেক সময় বলতে শুনি সিন্ডিকেট? এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গার শক্তি কি সরকারের নেই?
গোলাম রহমান: বাজারের বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট বা ওলিগোপলি কাজ করছে। সবাই মিলে একসঙ্গে অথবা এক জন মূখ্য সরবরাহকারিকে অনুসরণ করে পণ্যের দাম বাড়াতে পারে আবার কমাতে পারে। এ ক্ষেত্রে কঠোর আইনি ব্যবস্থা করা উচিৎ। যদি কেউ সরবরাহ অনৈতিক ভাবে বিঘ্নিত করছে এটা দৃশ্যমান হয়, যদি প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলেই এই প্রবণতার লাগাম টানা সম্ভব। কিন্তু আমরা এখানে যারা মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ি চিহ্নিত হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। আমাদের প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও কার্যকর হওয়া প্রয়োজন।
ভোক্তাকণ্ঠ: আমরা অনেক সময় দেখি, কোনো পণ্যের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে সরকার বা অন্যান্য সংস্থা ব্যবস্থা নিতে নিতে ব্যবসায়ীরা কয়েকশ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়। যেমন- আমরা ডিম, চিনি, সয়াবিন তেল, মুরগির দামের ক্ষেত্রে দেখেছি। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে কি ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেয়? আপনার কাছে কি মনে হয়?
গোলাম রহমান: সরকারের রেসপন্স অনেক সময় তাৎক্ষণিক হয় না। সরকারের
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শলাপরামর্শ প্রয়োজন। যেমন- এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য আমরাও এক সময় বলেছি পেঁয়াজের আমদানিতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে। এখন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাটা দেওয়া হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়কে। আমদানির পারমিট ইস্যূ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। যেহেতু কৃষককে ন্যায্য মূল্য দেওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির কোনো পারমিট দিচ্ছে না, তার সুযোগ নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এই মুহুর্তে যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বা কাছাকাছি থাকবে। এর মধ্যে পেঁয়াজ আমদানির বিবেচনা করা হচ্ছে তার ফলেই হয়তো দাম কয়েক টাকা কমেছে। দ্রুত একশন নিতে হলে যে ধরনের মেকানিজমের প্রয়োজন আমাদের এখানে তা নেই। সে জন্য ক্যাব থেকে আমরা সব সময় বলছি, যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটো ডিভিশন থাকা উচিৎ। একটা হলো বিজনেস ডিভিশন আরেকটা হলো কনজুমারস এফেয়ার্স ডিভিশন, যারা ভোক্তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে তড়িৎ ব্যবস্থা নেবে, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এটা এই মুহুর্তে হচ্ছে না। যার ফলে ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার সুযোগ পাচ্ছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: বাজার পরিস্থিতি সাধারণ ভোক্তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এমতাবস্থায় ক্যাবের সরাসরি কোনো ভূমিকা আছে কি না?
গোলাম রহমান: ক্যাব নিয়ন্ত্রণকারী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়। ক্যাব একটা এডভোকেসি গ্রুপ। আমরা পণ্য মূল্যের ব্যাপারে সব সময় সোচ্চার। যখনই আমাদের সুযোগ হয়, সরকারি পর্যায়ে হোক বা গণমাধ্যমে, আমরা এ ব্যাপারে আমাদের যে মনোভাব, ভোক্তা স্বার্থে কি করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আমরা সোচ্চার আছি। তবে সবকিছুই নির্ভর করে দেশের আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং বাজারের সরবরাহ পরিস্থিতি যাতে সন্তোষজনক থাকে সে ব্যাপারে সরকারকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পদক্ষেপ ্নেওার উপরে। আর একটা কথা, আমাদের ধারনা, যে পর্যন্ত সরকার মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সরাসরি অংশগ্রহণ থেকে দূরে থাকবে, সে পর্যন্ত অসাধু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট সময় ও পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অতি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
ভোক্তাকণ্ঠ: ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, অনেকেই অভিযোগ করছে, তারা নির্ধারিত কিছু সময় বাজারে একটিভ থেকে নিয়ন্ত্রণে অভিযানসহ অন্যান্য কর্মসূচি পরিচালনা করে। বাকি সময়টা নীরব থাকে। আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
গোলাম রহমান: বাংলাদেশের ভোক্তাদের অধিকার আছে এই জিনিসটি অধিকাংশ ভোক্তা জানতো না। ক্যাবের প্রচেষ্টায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন হয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে এখন গণমাধ্যমে ভোক্তাদের অধিকারের কথা বার বার আসছে। ভোক্তারা সচেতন হচ্ছেন এবং যদি প্রতারিত হন অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে অভিযোগ করছেন। বহুক্ষেত্রে প্রতিকার পাচ্ছেন। তবে মুদ্রাস্ফীতি কেবল ট্রেড পলিসির উপর নির্ভর করে না। ট্রেড পলিসির সঙ্গে সঙ্গে সময় উপযোগী, ফিসকেল পলিসি এবং মনেটারি পলিসি অনুসরণ না করা হয় তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। আর সে জন্য একটা সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন আছে। সে কারণেই আমরা বার বার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কনজুমারস এফেয়ার্স ডিভিশন প্রতিষ্ঠার জন্য সোচ্চার হচ্ছি এবং বলছি যে এই কনজুমারস এফেয়ার্স ডিভিশন প্রতিষ্ঠিত হলে তারা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্নয় করে, যাতে সময় উপযোগী ফিসকেল পলিসি এবং মনেটারি পলিসি, রেভিনিউ পলিসি অনুসরণ করা হয়, সে দিকে সচেষ্ট হতে পারবে।
ভোক্তাকণ্ঠ: ভোক্তা অধিদপ্তর কি আসলে ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে না কি ব্যবসায়ীদের? কারণ তাদের বেশির ভাগ সময় দেখা যায় ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। বড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তেমন অভিযান দেখা যায় না?
গোলাম রহমান: সাম্প্রতিককালে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সরকার চলে প্রভাবের উপরে। সে জন্য যাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বেশি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অনেক সময় কিছুটা দূরুহ হয়ে পড়ে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি, বেশ কিছু রিফাইনারী প্রতিষ্ঠান, ফ্যাক্টরিতে অভিযান করেছে। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণের চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রতিযোগিতা কমিশনের আরও জোরালো ভূমিকা রাখার প্রয়োজন আছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: ভোক্তা-অধিকার আইন ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় কতটুকু কার্যকর বলে মনে করছেন? বা কি কি পরিবর্তন করা প্রয়োজন?
গোলাম রহমান: ভোক্তা-অধিকারের আইনটি ভালো। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ভোক্তাদের যে অধিকারের সকল ক্ষেত্র কিন্তু এই আইনের আওতায় নেই। তাই এর সম্প্রসারণ হওয়া প্রয়োজন। উদাহরণস্বরুপ- একজন ভোক্তা প্রতারিত হলো -কোনো একটি মোবাইল কোম্পানির প্যাকেজ কিনে। ভোক্তা অধিদপ্তর দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করলো। কিন্তু এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন হয়তো হাজার হাজার, লক্ষ মানুষ। যেখানে অপরাধের ব্যাপকতা অনেক বেশি সেই আইনের যে শাস্তির বিধান তা অপ্রতুল। আর যেখানে জীবননাশের মতো পরিস্থিতি হয় সেখানে দুই বছর জেল অথবা দুই লক্ষ টাকা জরিমানা এটা অপর্যাপ্ত। তবে অনেক মূল আইন আছে যেখানে শাস্তির পরিমাণ অনেক বেশি। মূল আইনে যে শাস্তির পরিমাণ আছে সেটা যদি ভোক্তা-অধিকার আইনে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তাহলে এই আইনটি আরও বেশি কার্যকর হবে।
ভোক্তাকণ্ঠ: বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের রক্ষা করতে আপনার কোনো সুপারিশ বা পরামর্শ রয়েছে কি?
গোলাম রহমান: মূল্য যদি একবার বাড়ে সেটা কিন্তু সহজে নিয়ন্ত্রিত হয় না। এক সময় শায়েস্তা খানের আমলে ঢাকাতে এক টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। সে আমল তো আর কখনো আসবে না। তাই ভোক্তাদের আয়-রোজগার যাতে বাড়ে, কর্মসংস্থান যাতে বাড়ে, খরচের সঙ্গে সঙ্গে যাতে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে এবং জীবনমানের যাতে উন্নতি হয় সে দিকে অধিক নজর দেওয়া প্রয়োজন।