ফুরকানুল আলম: দ্রুত বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ বিষয়ক সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস-থ্রিসিএসের তথ্য বলছে, সোয়া লাখ বছরের মধ্যে উষ্ণতম মাস ছিল গত অক্টোবর। যাতে তাদের শঙ্কা ২০২৩ সাল হবে ইতিহাসের উষ্ণতম বছর।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্রুত বাড়ছে। এতে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আরও জোরালো হচ্ছে। যার অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ। এজন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের দিকে বেশি পরিমাণে ঝুঁকে পড়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
নবায়নযোগ্য শক্তি বা Renewable Energy হলো যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বার বার ব্যবহার করা যায় এমন শক্তি। এতে শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন- সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ু প্রবাহ, জলপ্রবাহ, জৈব শক্তি, ভূ-তাপ, সমুদ্র তরঙ্গ, সমুদ্র-তাপ, জোয়ার-ভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস। ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। যার ৪০ শতাংশ হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। তবে, এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের গতি এখনও ধীর। বর্তমানে এই হার রয়েছে ৪ শতাংশের কাছাকাছি।
নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসঙ্গ এলে অনেকেই এর খরচ ও স্থাপনে জমির প্রাপ্তি নিয়ে চিন্তিত হন। কিন্তু, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণা বলছে, এসব শঙ্কা পুরোটাই অমূলক। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ল্যাবরেটরি বলছে, বাংলাদেশে ২৪-৩৬ তলা ভবন বা স্থাপনায় বায়ুকল বসিয়ে ৩০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
২০২০ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সোলার্জিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণা বলছে, সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে প্রতি বর্গমিটারে ঘণ্টায় ৩.৮-৪.৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এমনকি টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষের ‘খসড়া জাতীয় সৌরশক্তি কর্মপরিকল্পনা ২০২১’ বলা হয়েছে, সৌরশক্তির ব্যবহারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে ২৫ হাজার মেগাওয়াট থেকে ৪০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত।
২০১৫ সালে প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুতের দাম ছিল গড়ে ১৮ টাকা। তবে, ৫ বছরের ব্যবধানে তা নেমে আসে ১১ টাকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউনিটপ্রতি সৌরবিদ্যুৎ মিলবে ১ টাকা ৯০ পয়সায়। দেশে এক মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরপার্ক বা সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে লেগেছে ৩ থেকে সাড়ে তিন একর জমি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, দেশে অকৃষি খাসজমি রয়েছে ১৮ লাখ একর। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য অকৃষি খাসজমি আছে ১০ লাখ একর। যার অর্ধেক দিয়ে এ সব সৌরপার্ক তৈরি করলে ১ লাখ ৪২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। ২ কোটি ১১ লাখ কৃষিজমিতে সমন্বিত কৃষি-সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে, আরও ১ লাখ মেগাওয়াটের বেশি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবে ২০২২ সালের এপ্রিলে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। এর চেয়ে বেশি চাহিদা আর কখনই ছিল না। তাই নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে আমাদের যে সুযোগ রয়েছে তার সিকিভাগও যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার পুরোটাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে মেটানো সম্ভব। এ জন্য দরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি সরকারের নীতিকাঠামো ও সদিচ্ছা।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল 24।
সৌজন্যে, জাগোনিউজ।