ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: ঢাকায় বায়ু দূষণ না থাকলে একজন নাগরিক আরও প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারতেন।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের প্রধান হুমকি বায়ু দূষণ; বায়ু দূষণ রোধে ধুলা দূষণ বন্ধ কর ও জ্বালানির মান উন্নয়ন কর’ শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এ কথা জানান।
বক্তারা বলেন, ঢাকায় বায়ু দূষণ না থাকলে একজন নাগরিক আরও প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর ছয় মাস। লাইফ ইনডেক্সের গবেষণার মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় দুই বছর আট মাস। ২০১৯ সালে বায়ু দূষণের কারণে সারাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। দেশের প্রত্যেক জেলাতেই বায়ু দূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত তিন গুণ বেশি। বায়ুদূষণ রোধ করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অতিদ্রুত আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ পরিবেশ বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
তারা বলেন, বায়ুদূষণ এখন মারাত্মক পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। ধুলা দূষণ, ইট ভাটা ও যানবাহনে নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহারের ফলে নির্গত ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে ইট ভাটায় জ্বালানি হিসেবে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে অত্যন্ত নিম্নমানের ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ব্যবহার করা হয়। এতে ধোঁয়া বেশি হয় এবং বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
মানববন্ধনে বলা হয়, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ, সমন্বয়হীন সংস্কার কাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদি ধুলা দূষণের প্রধান কারণ। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যানসার, শুক্রাণুর ক্ষতি, জন্মগত ত্রুটি, স্ট্রোকের ঝুঁকি, কিডনি রোগ, হার্ট অ্যাটাক, মানসিক সমস্যা, হতাশা, বিষাদ, অস্থিরতা এবং অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ধুলা দূষণ ও কয়লা ব্যবহারে নানা রোগের কেন্দ্রস্থল ঢাকা।
ধুলা দূষণের উৎস চিহ্নিত করে ধুলা দূষণ বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ এবং দেশে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত নিম্নমানের কয়লা আমদানি বন্ধ করা ও তরল জ্বালানি হিসেবে নিম্নমানের ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল বাজারে যাতে বিক্রি না হতে পারে তার কার্যকারী ভূমিকা পালনের দাবিতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) সমমনা ১৬টি সংগঠন এই মানববন্ধনে অংশ নেয়।
মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, বিডি ক্লিক, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি, গ্রিনফোস, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠন, বানিপা, জাতীয় সচেতন ফাউন্ডেশন (জাসফা), পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, মৃত্তিকা, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, পরিষ্কার ঢাকা, বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাপরিচালক মাহবুল হক, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসা, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ প্রমুখ।