নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন, বিইআরসি আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি, বিইআরসি আইন পরিবরর্তন, ভাড়া বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সুশাসন সংকট শিরোনামে সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর আয়োজনে অনলাইন নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইন সভাটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ক্যাবের মুখমাত্র ভোক্তাকণ্ঠ। অনলাইন নাগরিক সভায় দেশের সর্বস্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা অংশ নেয়। অনলাইন সভা সঞ্চালনা ও প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ছিলেন ক্যাবের সংগঠক সৈয়দ মিজানুর রহমান। অনলাইন নাগরিক সভার বক্তাদের আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করা হলো।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম
ভূতত্ত্ব বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রচুর তথ্য পেয়েছি নতুন তথ্য কিন্তু আমার কাছে কিছু নেই। সমস্ত শুনে এবং বুঝে যে ঘটনাগুলো ঘটছে আমি মনে করছি যে আমরা হোঁচট খাচ্ছি। বড় রকমের হোঁচট একটির পর একটি খেয়ে যাচ্ছি। আপনি কিভাবে এটি কনসিভ করবেন কুইক রেন্টাল এবং রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট গুলো একটি স্বল্প সময় ইমারজেন্সি কারণে এটি আসে সমগ্র বিশ্বেই করা হয় বাংলাদেশ ২০১০ সালে ইমারজেন্সি বেসিসে এইটি করা হয়েছিল স্বল্প সময়ের জন্য। কিন্তু সেটা ১০ বছর হয়ে গিয়েছে তাও একটা থামিনি এবং আজকের ধারণাপত্র যেটা দেখলাম যে এটি আরো ৫ বছর বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আপনারা সুশাসনের কথা বলেছেন কিন্তু আমি মনে করি কোন শাসনের চিহ্ন দেখতে পারছিনা। কার স্বার্থে এই কাজ হচ্ছে সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না। ডিজেল এবং ফার্নেস অয়েল ব্যবহৃত যেই পাওয়ার প্লান্ট গুলি সাধারণত তেলের উচ্চমূল্যের জন্য ব্যয়বহুল হয়। একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র মনে করি আমি গ্যাস সেক্টর টাকে পিছনের দিকে ঠেলে নিয়ে এর অগ্রগতি কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা যায় সেই পন্থাটি কার্যর রয়েছে এবং অল্টারনেটিভ হিসাবে ভোক্তা দের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এল এন জি এবং লিকুইড ফুয়েল। এল এন জি এটি অতি উচ্চ মূল্যের এলএনজি যখন ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখন যে মূল্য ছিল বর্তমানে তা প্রায় দ্বিগুণ। সমগ্র পৃথিবীতে এলএনজি অনেক ব্যয়বহুল। জাপান কোরিয়া এলএনজি ব্যবহার করে অর্থনীতিতে উন্নত করেছে কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির সাথে এটি কতটা সমঞ্জস্যপূর্ণ এটাই প্রশ্ন। এল এন জি এর উপর নির্ভরশীলতা এটা কি আবশ্যক ছিল? এটি মোটেও ছিল না যদি আমরা গ্যাস উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে করতে পারতাম। আমাদের বিরাট একটি সাগর আছে সেই সাগরে ভারত মায়ানমার বিপুল পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করছে। কিন্তু আমরা এর কোন ফলন করছি না যেকোনো কারণেই হোক গত ১০ বছর ধরে সাগরে কোনো একটিভিটি নেই আমাদের। এবং গত ২০ বছরে যদি আপনি হিসাব করেন ২০০১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এক্সপ্লোরেশন এর ধারা লক্ষ্য করেন যেসব দেশে গ্যাস সমৃদ্ধ সেই সব দেশে যেই এক্সপ্লোরেশন হার সেই অনুযায়ী আমাদের দেশে ধারে কাছে নেই। কোন এক্সপ্লোরেশন ই হচ্ছেনা না হচ্ছে সাগরে না হচ্ছে ভূখণ্ডে। এইযে হোঁচট টা আমরা খাচ্ছি আমাদের এমার্জেন্সি আমরা কুইক রেন্টাল কিছু তৈরি করলাম তারপর দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট কয়লা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট চলে আসলো। এখন বিদ্যুৎ হচ্ছে সারপ্লাস ক্যাপাসিটির অর্ধেকও আমরা ব্যবহার করি না। তারপরেও কুইক রেন্টাল গুলো আমাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে এর উত্তরটি কি হতে পারে। আমাদের যেখানে বিদ্যুতের সারপ্লাস আছে সেখানে কুইক রেন্টাল কেন থাকবে। আমাদের বিরাট আকারের বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি নিয়ে আমরা একদিকে ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল চালাচ্ছি অন্যদিকে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার জন্য যায়গা খুজতেছি। এইগুলো হচ্ছে উপলোড পালট শাসনের সাক্ষ্য সুতরাং এই জিনিসগুলো কে স্ট্রিম লাইনে আনার জন্য এখন রাইট টাইম ক্যাবের এইযে আয়োজনটি আজকে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময় উপযোগী বলে মনে করছি। ভয়েস রেইজ না করলে যেই ভাবে দুর্বৃত্তায়ন হচ্ছে অর্থনীতির এই দিকটাতে এটা বন্ধ করা যাবে না। শক্তভাবে একটি কন্ঠ এবং বহু কন্ঠের একটি শক্তি দরকার আমি মনে করি ক্যাব এই মুহূর্তে এই দায়িত্বটি পালন করছে। আমি ক্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনারা এই বিষয়গুলি আজকে তুলে ধরে এনেছেন। এটি দলের বিষয় নয় এটি রাজনৈতিক বিষয় নয় সেটি সাধারণ ভোক্তার বিষয় এবং দেশের অর্থনৈতিক সংকটময় অবস্থানের বিষয়।
অধ্যাপক এজাজ হোসেন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
সরকারের প্রথমেই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত “আমাদের এখনো সমস্যা রয়ে গেছে আমরা ম্যানেজ করতে পারছিনা এনার্জি সেক্টর তাই আমরা এখনো এটি চলমান রেখেছি”। আমরা এই আইনটিকে ১০ বছর আগে একসেপ্ট করেছিলাম। এই সরকার এত বড় একটি সমস্যা নিয়ে আরম্ভ করেছেন তখন তাদের এই ছারটি দেয়া যায় প্রথমবার দ্বিতীয়বার কিন্তু এখনো যে কন্টিনিউ করা হচ্ছে এটা অন্য পর্যায়ে চলে গেছে। আমি টেকনিক্যাল একটা কথা বলি আমাদের এনেরজি সেক্টর এবং অন্যান্য সেক্টরে আমাদের সাংঘাতিক একটু দুর্বলতা আছে সেটা হচ্ছে প্ল্যানিংয়ের দুর্বলতা। এই যে আমরা দেখতে পাচ্ছি আজকে আমাদের ওভার ক্যাপাসিটি হয়ে গেছে। আমরা বলছি ২৫ হাজার মেগাওয়াট সর্বোচ্চ আমাদের ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত গিয়েছে বেশিরভাগ সময়ই ১২ হাজার মেগাওয়াট নিয়ারলি ইকুইভ্যালেন্ট অ্যামাউন্ট আইডিয়াল বসে আছে। তাদেরকে বসিয়ে বসিয়ে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি প্রণোদনা দিচ্ছি এবং যে কারণে আমাদের বিদ্যুতের দাম টা বেশি। এইযে প্লানিং এর অভাব এই কারণেই তারা আইনগুলোর সহোযোগিতা নিচ্ছে কারণ হচ্ছে তারা ঠিকমতো করে বুঝতে পারে না কখন কি হবে। আপনারা সবাই জানেন আমাদের একটি বড় পাওয়ার প্ল্যান্ট পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্ট যেটা পায়রা বন্দরে অবস্থিত। পাওয়ার প্লান্ট তৈরি শেষ এইগুলোর সকল পরিকল্পনা ২০১৩ হয়েছে এবং পাওয়ার প্লান্ট তৈরি সম্পূর্ণ হয়েছে কিন্তু ট্রানস্মিশন লাইন সম্পন্ন করা হয়নি। তারা জানে যে পাওয়ার ট্রানস্মিশন করতে হবে কিন্তু তারা ট্রানস্মিশন লাইন কমপ্লিট করতে পারিনি। আমরা প্রতি মাসে তাদের ১০০ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। তারা সেখানে কিছুই করছে না বসে আছে তাদের দুটো ইউনিট আছে এর মধ্যে একটি সচল আমরা তাদের ১০০ কোটি টাকা প্রতিমাসে দিচ্ছি কারণ আমাদের ট্রান্সমিশন লাইন কমপ্লিট হয়নি। আপনারা একটু ভেবে দেখেন কি রকম তাদের প্ল্যানিংয়ের দুর্বলতা এবং অক্ষমতা।
এই ধরনের অক্ষমতা এবং দুর্বলতা যদি থাকে তখন এই ধরনের আইন প্রয়োজন হয়। তারা নিজের ব্যর্থতাটাই এখানে প্রমাণ করে দিয়েছে। একটি ডেমোক্রেটিক দেশে আমরা যদি এটিকে সত্যি সত্যি ডেমোক্রেটিক দেশ বলি যেখানে আমরা সবাইকে একাউন্টেবল রাখব। আমরা মনে করি ডেভলপ দেশে এইসব আইন নেই, ডেনমার্কে এইসব পাবলিক পারচেস আমি তাদের আইন পড়ে দেখেছি এত কমপ্লিকেটেড এত রকমের রেস্ট্রিকশন আছে তার মধ্যে তারা ম্যানেজ করছে। আমাদের যেই আমলারা আছে আমাদের যারা সরকারি এইসব ব্যাপারে নীতিনির্ধারক আছে তারা কেন এই টেন্ডারিং প্রসেসটা ম্যানেজ করতে পারে না যেই কারণে তারা এইসব আইন নিয়ে এসেছে। এইসব দুর্বলতা অবশ্যই তাদেরকে দূর করতে হবে। তবে আমি দেখতে পাচ্ছি এখানে এই আইন রাখার একমাত্র যুক্তি তাদের একটা প্ল্যানিংয়ের দুর্বলতা আছে ঠিক সময় কি করতে হবে কখন কি করতে হবে তা বুঝে উঠে না। যেই কারনে টেন্ডারিং-এর প্রসেসে আপনাকে কোনো কিছু করতে হলে আপনাকে ভালোভাবে জিনিসটা বুঝতে হবে সময়মতো জিনিসপত্র করতে হবে আমরা তো সেটা করি না। আমরা দিন আনি দিন খাই এভাবে জিনিসপত্র চালাই। ব্রিফকেস নিয়ে একজন আসলো মন্ত্রীর অফিসে, আরেকটা প্রজেক্ট যেটা কোন রকমের প্লানিং এর মধ্যে নেই আরাম্ভ হয়ে গেল। একটা কোম্পানি অনেকদিন যাবত নেগোশিয়েট করছে সে চলে গেল আরেকটা চলে আসলো এই সব যদি করতে হয় তখনই এই ধরনের আইনের প্রয়োজন হয়ে যায়। আমাদের এনার্জি সেক্টরে উন্নতি যদিও কিছু হয়ে থাকে কিন্তু আমাদের সাংঘাতিক রকমের টেকনিক্যাল এবং নন টেকনিক্যাল দুর্বলতা রয়েই গেছে।
অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম
জ্বালানি উপদেষ্টা
কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)
২০০৮ সাল থেকেই বলা যায় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল তৈরি করেছিলাম আইওসি থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনতে হবে অন্তত তার থেকে অর্ধেক দামে গ্যাস কেনা যায় সেই জন্য আমরা গ্যাস উন্নয়ন তহবিল তৈরি করেছিলাম। ২০২০ সালে যদি বিদ্যুতের গণশুনানির তথ্য আপনাদের শুনাই তাহলে সেখানে দেখা যাবে আইওসির গ্যাসের দাম সেখানে পড়ছে ২ টাকা ৫৫ পয়সা পার কিউবিক মিটার। আর সেখানে বাটেক্সের গ্যাসের দাম পড়ছে তিন টাকা। ভুক্তভোগীদের লেখা না দেখলে এভাবে আমাকে যদি কেউ শোনাতো তাহলে আমি বিশ্বাস করতে পারতাম না। ইলেকট্রিসিটি প্রাইস গ্যাসের সাবসিডি যাচ্ছে এবং বিদ্যুতের সাবসিডি যাচ্ছে। এদুটো সাবসিডি যদি এক করা হয় তাহলে এ মুহূর্তে ১৫ হাজার কোটি টাকা সাবসিডি লাগছে এগ্রিকালচার সেক্টর থেকে যে সাবসিডি বিদ্যুতে সরাসরি দেয়া হয় সেটা এখানে সমন্বয় হয়নি। যদি এটা সমন্বয় করা যায় তাহলে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে ৮ টাকা থেকে ৮.৫ টাকা পড়ে যায়। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করার কথায় আসা যাক। সেই বিদ্যুত গ্যাসের না হলে দাম পরে ছয় টাকার নিচে, গ্যাস থেকে ত্রিপুরার হলে সাত টাকার উপরে পড়ে। তাহলে দেখুন, আপনারাই কিছুদিনের মধ্যে দাবি তুলবেন আমাদের আর বিদ্যুৎ তৈরি করার দরকার নেই। আমরা অলরেডি ভারত থেকে তেল আমদানি করার জন্য পাইপ লাইন তৈরি করছি। অন্যান্য জ্বালানি আমদানি করার ব্যবস্থাও করছি। সবচেয়ে কম বিদ্যুতের দাম হচ্ছে পানি বিদ্যুৎ বা জলবিদ্যুৎ। সে বিদ্যুৎ এর কথায় সরকার দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছিলেন নেপাল থেকে তা আমদানি করা হবে কিন্তু মাঝখানে যে থার্ড পার্টি হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ ইন্ডিয়ায় আনতে হবে, ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ীরা কিনবে তারপর সেখান থেকে আমরা আমদানি করব এই চুক্তিটি অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। সাংবাদিকরা আমাকে বলেছে। কিন্তু ওই প্রশ্নটা সমাধান হয়নি যে সেই বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয় পড়বে ৮ টাকা।
২০০৮ এবং ২০০৯ সালের দিকে রেন্টাল বিদ্যুৎ যখন আসলো তখন বলা হলো যে হুহু করে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাচ্ছে। একই বছরে একবারের বেশি দাম বৃদ্ধি করার বিধান না থাকলেও একই বছরে একাধিকবার দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে আদালতের ইন্টারফেয়ারেন্স হয়েছে এসব ঘটনা আমরা জানি। এখন রূপকল্পে বলা হয়েছিল ২০১৫ সালে দাম কমিয়ে আনা হবে। সেখানে দাম কমানোর একটা রেখাচিত্র দেয়া হয়েছিল কিভাবে দাম কমবে। ৫.৫ টাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে এরকম স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের পরে বলা হলো পৃথিবীর কোথাও বিদ্যুতের দাম কম নেই। সুতরাং বিদ্যুতের দাম কমার কথাটা আল্হাদের তরফ থেকে বড় গলায় বলা হয়েছিল। বিদ্যুতের দাম বাড়বেই, বাড়তেই থাকবে; সে দাম বাড়তে বাড়তে আজকের এইই পর্যায়ে চলে গেছে। যে তথ্যচিত্র গুলো দিলাম সেগুলো হচ্ছে আল্টিমেটলি যেসব অব্যবস্থার কথা নানাভাবে এসছে। আমার আগের ভোক্তদের মুখ থেকে তারই প্রতিক্রিয়া প্রভাবে প্রতিফলন এবং আল্টিমেট রেজাল্ট হিসাবে আমরা এটা পেয়েছি কারণগুলো এটা, হিসেবগুলো এটা।
সঠিক মানে এবং সঠিক মাপে যেকোনো পণ্য পাওয়ার মৌলিক অধিকার হচ্ছে ভোক্তাদের অধিকার। সেই জন্য যে মিটারে মেপে দেওয়া হবে সেই মিটারে গোলমাল হয়ে গেছে। গ্যাস দেওয়া হয় অর্ধেক দাম নেওয়া হয় দ্বিগুণ। ৭৭ ইউনিটের গ্যাসের দাম নেয়া হয় অথচ আমরা ব্যবহার করি ৩০-৫০ এর বেশি না। এখন প্রচন্ড গ্যাস সংকট শুরু হয়ে গেছে। ২০ ইউনিটই আসবে কিনা জানিনা ৭৭ ইউনিট তো দূরের কথা। বিপুল পরিমাণে গ্যাস চুরি হয়। আমরা জানি, বিআরসি নিজে বলেছে আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস প্রতিবছর চুরি হয়। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বিভাগকে জানানো হয়েছে, মিটার দিতে বলা হয়েছে। মিটার কিনবে কোম্পানিগুলো, গতকাল সংসদীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং তাদের অনুরোধ এসেছে যে কোম্পানিগুলো মিটার কিনবে। কেন কোম্পানিগুলো মিটার কিনবে? কোম্পানির একবার গ্যাস বিক্রি করতে গিয়ে এবং বিদ্যুৎ বিক্রি করতে যে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা সেখানে ন্যায্য এবং সঠিক দামে জিনিস পাচ্ছিনা, নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে আবার তাদেরকে মিটারের ব্যবসাটা কেন দিতে হবে? মিটার খোলা বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাবে ভোক্তা এটাই বিধান। সেখানে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ব্যবসা হবে, মানুষ বেঁছে নির্ধারিত স্পেসিফিকেশন মিলিয়ে কিনবে। সে অধিকার বঞ্চিত করে এই মিটার দিয়ে যে মাপা হবে এবং সীমাটাকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়া হবে। বছরের পর বছর এভাবে গ্যাস চুরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন আমরা বিশেষভাবে বলতে চাই, যে কথাটা আসছে, আইন দেশদ্রোহী, আইন গণ বিরোধী এই সমন্ত কার্যক্রম উন্নয়নের নামে যা ঘটছে তা গণবিরোধী। প্রায় প্রায়ই আমরা শুনতে পাই, যা কিছুদিন আগে যেটা দেখতে পেলাম যে পুলিশ মগবাজারের বিস্ফোরণ ঘটনাকে হত্যাকান্ড হিসেবে মামলা করেছে একথাটি কয়েক বছর ধরে আমরা ক্যাবের তরফ থেকে বলে আসছিলাম যে গ্যাসের দুর্ঘটনা, বিদ্যুতের দুর্ঘটনা এই সমস্ত দুর্ঘটনাকে, বিস্ফোরণ, মৃত্যু হত্যাকান্ড, আহত এসমস্ত ঘটনাকে আর দুর্ঘটনা হিসেবে চালানো যাবে না। এগুলোকে হত্যাকান্ড হিসেবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে এসব হত্যাকান্ডের দায়ে যারা অপরাধী তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এবার এসব প্রক্রিয়ায় যে মূল্যহার এর কথা আমার আগের বক্তারা বলেগেছেন পরে যে মূল্যহার তৈরি হয়েছে সেই মূল্যহার কে আমরা বহুবার গণশুনানিতে বহু কাগজপত্রে, লেটারে ভদ্রভাবে বলেছি। অযৌক্তিক মূল্য, অন্যায় মূল্য লুণ্ঠন মূলক মূল্য, লুন্ঠন মূলক ব্যয়। এই ব্যয় যৌক্তিক নয়। যে ব্যয় এই বাংলার মাটিতে, ভারতবর্ষে বর্গীরা করে গিয়েছিল, লুন্ঠন করে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের। যে সম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে গেছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বণিকরা। যার জন্য আমাদের রাষ্ট্র তাদের দখল করার দরকার হয়েছিল। তারাও সম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে গেছে। আজকে এই প্রক্রিয়ায় যে অর্থ্য আমাদের কাছ থেকে অযৌক্তিকভাবে নেয়া হচ্ছে এই সরবরাহ ব্যয়ের নামে, এই উৎপাদনের নামে এই ব্যয় ঐ নাম এভাবে এ সমস্ত আইনের আওতায় এক গুণ, দশ গুণ, পাঁচ গুণ দাম বাড়ানো হচ্ছে। যদি আরেকটা উদাহরণ দেখেন, এখানে যে ভারতে ট্রানস্মিশন লাইন যদি এক কোটি টাকা পার কিলোমিটার লাগে তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কেন ১০ কোটি টাকা লাগে? এই ১০ কোটি টাকা কি লুন্ঠন মূলক ব্যয় নয়? এই ১০ কোটি টাকার মূল্য যখন আমার বিদ্যুতের দামের সাথে সমন্বয় হয় তাহলে কি আমি বলব না যে এটা লুণ্ঠন মূলক ব্যয়? সমন্বয় করে আমারকাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে সেটা লুণ্ঠন মূলক।
এ লুন্ঠনের হাত থেকে আমরা বাঁচতে চাই। ব্রিটিশদের ছাড়া হাত থেকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা একের পর এক বাঁচার জন্য যে লড়াই করেছে, আমাদের মধ্যে, আমাদের ভাই-আমাদের বোন, আমাদের স্বজনরা সে ধরনের চরিত্রে আমাদেরই লুণ্ঠন করেছে। তাদেরকে প্রতিহত করতে চাই। তাদের হাতে কখনো রাষ্ট্রের ক্ষমতা আছে, তার কখনো ব্যবসার ক্ষমতা আছে, কখনো আনাইনের ক্ষমতা আছে, নানা ক্ষমতায় তারা ক্ষমতাবান হয়ে আমাদের তারা লুন্ঠন করছে।