ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: রাজধানী ঢাকার সব রুটে পর্যাপ্ত সংখ্যক ও মানসম্মত বাস চলাচল নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) ১২টি সংগঠন। একই সঙ্গে রাজধানীর সড়কে প্রাইভেটকার চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবি জানানো হয়েছে।
সংগঠনগুলোর মতে, রাজধানীতে বসবাসকারীদের মাত্র ৫ শতাংশ প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন। অথচ এই ৫ শতাংশ প্রাইভেটকার ব্যবহারকারীদের দখলে রাজধানীর ৭০ শতাংশ সড়ক।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘যানজট নিরসনে সব রুটে পর্যাপ্ত বাস নিশ্চিত করো ও নিয়ন্ত্রণ করো প্রাইভেটকার’ শীর্ষক মানববন্ধনে দাবিগুলো জানানো হয়। পবাসহ ১২টি সংগঠন যৌথভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা যাতায়াত সংশ্লিষ্ট সব নীতিনির্ধারক, কনসালটেন্ট এবং কর্মকর্তাদের গণপরিবহনে চলাচল বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, বিআরটিসির অধিকাংশ বাস ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়া আছে। এই লিজ প্রথা বাতিল করে দুর্নীতিমুক্ত নিজস্ব উন্নত ব্যবস্থাপনায় বাসগুলোকে গণপরিবহন হিসেবে চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, জাতীয় সচতেন ফাউন্ডেশনের (জাসফা) প্রধান সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম মনির, বাংলাদশে ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার প্রমুখ।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেটকারকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কারণ রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলকারী ৫ শতাংশ বাসিন্দার জন্য সড়কের ৭০ শতাংশ জায়গা দখল হয়ে যায়। তাতে করে সৃষ্ট যানজটে রাজধানীতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যেই প্রতিদিন নগরীর রাস্তায় নামছে প্রায় ২০০ নতুন গাড়ি, যা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার জন্য।
তিনি বলেন, কোনো রুটেই পর্যাপ্ত বাস থাকে না। ফলে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে বাসে উঠতে বাধ্য হয়। অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও বাসে ওঠা যায় না। যার কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে ছোট ছোট যানবাহনে যাতায়াত করেন। অনেকে দুর্ঘটনা এড়াতে বাসে ওঠার ঝুঁকি নিতে চান না বলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হন। ফলে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, রাজধানীতে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে যানজট নিরসনে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ ও সব রুটে পর্যাপ্ত বড় বাস নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা জরুরি। কারণ দুটি প্রাইভেটকারে দুজন যাত্রী সড়কের যে জায়গা দখল করেন, সেই একই জায়গায় গণপরিবহনের একটি বাস অর্ধশতাধিক যাত্রী বহন করতে পারে। কর্মস্থলে পৌঁছার জন্য দুর্ভোগ কমাতে প্রাইভেটকারকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা কমিয়ে আনতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে রাজধানীর সড়কে চলার উপযোগী পরিবেশ নেই। কোথাও যাওয়া মানেই দুর্ভোগ। অফিসে সময়মতো যাওয়া রীতিমতো বিড়ম্বনা। যানজটের কারণে নগরী এখন চলাচলের অনুপযোগী।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিশ্বব্যাংক একটি গবেষণা প্রকাশ করেছিল। গবেষণায় বিশ্বব্যাংক বলছে, যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকায় গাড়ির গতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার। বিশ্বব্যাংকের মতে, এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ।