অতিঝুঁকিপূর্ণ ২০ মার্কেট-বিপণিবিতান, ভাঙায় গড়িমসি

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: অতিঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন অন্তত ২০টি মার্কেট-বিপণিবিতান। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১১টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মার্কেট ৯টি। এসব মার্কেট যে কোনো সময় ধসে পড়া ও অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবু মার্কেটগুলো অপসারণ বা ভাঙার উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি বঙ্গবাজার ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আগুনে পুড়ে পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে বঙ্গবাজার। অথচ এই দুটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ও ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে- বারবার এমন নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু কোনো নোটিশ আমলে নেয়নি সিটি করপোরেশন এবং দোকান মালিক সমিতি।

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করতে বারবার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাধায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট যেন না ভাঙা হয়, সেজন্য তারা উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। তবে বঙ্গবাজার ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ব্যবসায়ীদের টনক নড়েছে। সিটি করপোরেশনও উদ্যোগ নিয়েছে এসব মার্কেট ভাঙার। শিগগির ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো অপসারণ শুরু করা হবে।

ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, তাদের ১১টি মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের অতিঝুঁকিতে ছিল কিংবা এখনো রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবাজার আগুনে পুরোপুরি পুড়ে গেছে। ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের আংশিক পুড়েছে। বাকি মার্কেটগুলো হলো- নয়াবাজারের নওয়াব ইউসুফ মার্কেট কমপ্লেক্স, দয়াগঞ্জ ট্রাকস্ট্যান্ড রোডসাইড মার্কেট ভবন, ঠাঁটারিবাজার মার্কেট, সিদ্ধেশ্বরীতে লিলি প্লাজা মার্কেট, খিলগাঁও রেলওয়ে কাঁচাবাজার, আজিমপুর কবরস্থান মার্কেট ও আজিমপুর এতিমখানা মার্কেট। এছাড়া দেবীদাস ঘাট সংলগ্ন বরিশাল হোটেল ভবন ও জিন্দাবাহার প্রথম লেনের ভবন ও ৪১/১, ২, ৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের ভবনটি অতিঝুঁকিতে আছে। এসব ভবন সিটি করপোরেশনের মার্কেটের তালিকায় না থাকলেও এ ভবনগুলোতে দোকান রয়েছে। তবে তার কোনোটিতেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট’ এমন লাল নোটিশ টাঙানো দেখা যায়নি।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কাঠ, বাঁশ, টিন ও স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি এ মার্কেটটি ২০১৯ সালে আগুন লাগা এবং ধসে পড়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস। তখন সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাধার কারণে মার্কেটে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।

এর আগে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া এবং পিলার ফেটে যাওয়ায় ২০০৭ সালে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট পরীক্ষার জন্য বুয়েটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বুয়েট সবকিছু পরীক্ষা করে তা দ্রুত সংস্কার করার কথা বলেছিল। কিন্তু ওই সময় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ, বনলতা কাঁচাবাজার ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট পরীক্ষা করা হয়। তিনটির মধ্যে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটই ধসে পড়া এবং আগুনের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। তখন দুই দফায় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা সাইনবোর্ড লাগান ডিএসসিসির কর্মীরা। কিন্তু লাগানোর পরই তা খুলে ফেলেন দোকান মালিক সমিতির নেতারা। অথচ মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা খালি করতে প্রতিবেদনে নির্দেশনা রয়েছে।

গত ১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শন করেন ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তখন তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, মার্কেট ঝুঁকিমুক্ত করতে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমে যেতে হবে। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা নয়, ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তা যেন আর ব্যবহৃত না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। এই পূর্ণ কার্যক্রমের আগে নেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন ডিএসসিসি এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি মার্কেট ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে পর্যায়ক্রমে আমরা তা করবো। যদি সেটা ভেঙে ফেলতে হয় তবে সেটা ভেঙে ফেলা হবে এবং নতুন করে নির্মাণ করা হবে।