অনলাইনে প্রতারণা: ‘ওরা অনেক মানুষকে বোকা বানাচ্ছে’

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জিন্নাত আরা খান। তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। বোনের বিবাহ উপলক্ষে একটি সিতা এবং একটি ডায়মন্ড কাটের সেট নিতে আগ্রহী তিনি। সময় কম থাকায় ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন বিজনেজ প্ল্যাটফরমগুলোতে খুঁজতে থাকেন তার কাঙ্খিত পণ্যটি। 

খুব বেশি সময় খুঁজতে হয়নি। হাতের মোবাইলে অল্প সময়ের মধ্যে ভেসে ওঠে Styline Fashion Bd নামের একটি ফেসবুক পেইজের পোস্ট। সেই পেইজে গিয়ে জিন্নাত তার কাঙ্খিত সিতা এবং ডায়ামন্ড কাটের সেট অর্ডার করেন।

তবে এসব ফেসবুক পেইজ অনেক সময়ই ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে এ বিষয়টি জিন্নাতেরও জানা আছে। তাই পেইজের রিভিউ এবং ফলোয়ার দেখেন। এসব দেখার পর পেইজটির উপর কিছুটা বিশ্বাস করে অর্ডারটি কনফার্ম করেন। 

বোনের বিয়ের খুব একটা সময় না থাকায় দ্রুত পণ্যগুলো প্রয়োজন। তবে দ্রুত পণ্য নিতে আগেই দাম পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয় Styline Fashion Bd নামের সেই পেইজ থেকে।

বোনের বিয়েতে প্রচুর কাজ থাকায় অনলাইনেই ওদের বিশ্বাস করে এক হাজার ৬৫০ টাকা অগ্রিম দেন জিন্নাত। তবে যে তারিখে পণ্যটি দেওয়ার কথা সেই তারিখে কোনো ম্যাসেজ পাননি তিনি। একদিন পরে ম্যাসেজ পেয়ে স্থানীয় কুরিয়ারে পণ্যগুলো সংগ্রহ করে সেখানেই আনপ্যাক করে দেখেন পণ্যটি ভাঙ্গা এবং যে কোয়ালিটির দেওয়ার কথা ছিল তার থেকে নিম্মমানের দেওয়া হয়েছে। 

পরে বিষয়টি ওই পেইজে ম্যাসেজ দিয়ে জানানো হলে, তাদের পক্ষ থেকে প্রমাণ হিসেবে ভিডিও এবং ছবি চাওয়া হয়। ভিডিও এবং ছবি পাঠানোর পরে অনলাইনটি শপটির পক্ষ থেকে জবাব আসে তারা না কি ভালো প্রোডাক্ট পাঠিয়েছে। 

ভালো প্রোডাক্ট পাঠানোর প্রমাণ স্বরুপ Styline Fashion Bd কে ভিডিও পাঠাতে বলেন জিন্নাত। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। পণ্যটি পরিবর্তন করে নিতে চাইলে এবার নতুন করে ফাঁদ আটে অনলাইন শপটি। জানানো হয়, পণ্য পরিবর্তন করে নিতে হলে দিতে হবে বাড়তি চার্জ। তবে নতুন করে আর ফাঁদে পা দেননি জিন্নাত। 

প্রমাণাদিসহ কথপোকথনের স্কিন শর্টসহ পেইজে নেতিবাচক রিভিউ দেন জিন্নাত। রিভিউ দেওয়ার পর পেইজের ম্যাজেঞ্জার থেকে সরি বলা হয়। এছাড়া সরাসরি ফোন করে বিরক্ত করতে থাকে। 

পরে জিন্নাত জানিয়েছেন, ‘আমি টাকা বা জিনিস কোনটাই চাই না। আমার মত শিক্ষিত মানুষ যদি বোকা হয় তাহলে আরও অনেক মানুষকে তারা বোকা বানাচ্ছে। আর যেন কেউ বোকা না হয়। তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। দেশ চোরমুক্ত হলেই দেশ সুন্দর হবে।’

এমন প্রতারণার কথা উল্লেখ করে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কল সেন্টারে কল দিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সঙ্গে এমন প্রতারকদের শাস্তি দাবি করেছেন জিন্নাত আরা খান।

এসব বিষয়ে জানতে ক্যাবের ডিজিটাল প্লাটফর্ম ভোক্তাকণ্ঠের পক্ষ থেকে জিন্নাত আরা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি গত ডিসেম্বর মাসে Styline Fashion Bd নামের ফেসবুজ পেইজের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হই। পরে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কল সেন্টারে কল করে লিখিত অভিযোগ জানাই। প্রমাণাদিসহ ভিডিও এবং কথোপকথনের স্কিনশর্টও দেই। তবে এখন পর্যন্ত ক্যাব কল সেন্টার বা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ‍অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করেনি। কোনো বার্তাও পাইনি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে Styline Fashion Bd নামের ফেসবুক পেইজের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। পেইজের দেওয়া মোবাইল নাম্বারে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। তাদের পেইজের মেসেজ করলে নতুন নাম্বার দেয়। সেই নাম্বারে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করলে, পেইজের মালিক দাবি করে একজন নারী বলেন, ‘আমরা সব সময় আমাদের কাস্টমারদের সমস্যাকে গুরুত্ব দেই। আমরা ইচ্ছে করে ভাঙ্গা প্রোডাক্ট দেইনি। আমরা কাস্টমারকে পণ্য কেনার সময়ই বলে দেই, পণ্য নেওয়ার সময় অবশ্যই দেখে নেবেন। কাস্টমার আমাদের জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেই।’

কাস্টমার জানিয়েছে তারপরেও ব্যবস্থা নেন নি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হয়তো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। অনেক দিন আগের কথা তেমন মনেও নেই।’

উল্লেখ্য, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগটি দাখিল করা হয়েছে।

-এসআর