ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রঙে সর্বোচ্চ ৯০ পিপিএম পর্যন্ত সিসা ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ করা আছে। ২০১৮ সালে এ মাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। কিন্তু এখনো দেশের বিভিন্ন রং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ মাত্রায় সিসা ব্যবহার করছে।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডোর ‘লেড ইন পেইন্টস: অ্যা সিগনিফিক্যান্ট পাথওয়ে অব লেড এক্সপোজার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশে রঙে সিসা ব্যবহার নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে এবং ডেকোরেটিভ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে আগের এবং বর্তমানের সিসার মাত্রার ফলাফল তুলনা করার জন্য এসডো এই গবেষণা করে। সেজন্য ৩৯টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডসহ মোট ৬৩টি লাল, হলুদ এবং সোনালি রঙের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা করা নমুনার মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
পরীক্ষা করা নমুনার মধ্যে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ ডেকোরেটিভ পেইন্টে ৯০-২৫০ পিপিএম পর্যন্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাকি ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ ডেকোরেটিভ পেইন্টে সিসার মাত্রা ছিল ৯০ পিপিএমের কম। তবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে ভয়াবহ মাত্রায় সিসার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। মোট নমুনার ৫০ শতাংশে উচ্চ মাত্রার সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কমলা রঙে সর্বোচ্চ ৯৭ হাজার পিপিএম পর্যন্ত সিসার মাত্রা শনাক্ত হয়েছে।
মোড়কে সিসামুক্ত রঙের লোগো থাকা সত্ত্বেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল রঙে সর্বোচ্চ সীসার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্টে এমন উচ্চ মাত্রায় সিসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক।
এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও বিএসটিআইয়ের কেমিক্যাল বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, উন্নয়নশীল দেশে সিসাযুক্ত রঙের সংস্পর্শে আসার কারণে শিশুরা আজীবন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। রঙে সিসার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন শিশু সিসা দূষণের শিকার। রক্তে সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর সিসার ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর বিষক্রিয়া কমাতে আরও গুরুত্বসহকারে সিসার উৎস খুঁজে বের করতে হবে।
সংগঠনটির মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, আমরা ঘর সাজানোর জন্য সিসাযুক্ত রং ব্যবহার করে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শিশুদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। শিশুদের স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ দিতে এবং নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রঙে সিসার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।