ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: এবার রমজানে কঠোর অবস্থানে যাবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাজার অস্থিতিশীল করতে যারা পণ্য মজুদ করবে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
সোমবার সকালে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে গরম মসলার মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে একটি মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সফিকুজ্জামান বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সকলের সাথে সমন্বয় করে নিবিড়ভাবে বাজার অভিযান পরিচালনা জোরদার করা হবে। পণ্য মজুদ রেখে বাজার অস্থিতিশীল করা হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কঠোর ব্যবস্থা নিবে।
সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, ক্যাবের বাজার বিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবলুসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ।
সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা না দেয়া, ক্রয়ের ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ না করা, বিক্রয়ের ক্যাশমেমো না দেওয়া এবং দিলেও কার্বন কপি সংরক্ষণ না করা, আমদানি সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র না থাকা, পাইকারি মূল্য খুচরা মূল্যের সামঞ্জস্য না থাকা, খাদ্যপণ্যে শিল্পে ব্যবহৃত রং/টেক্সটাইল কালার ব্যবহার করা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রাক বাজেটের পূর্বে সেক্টরভিত্তিক সংশ্লিষ্টদের সাথে যেন সভা করা হয়, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পত্র প্রেরণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় মসলার বাজার অস্থিতিশীল ও সরবরাহ সংকট হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান এলসি খোলার ক্ষেত্রে সমস্যা, ডলার এর মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি মতবিনিময় করেন উপস্থিত বক্তারা।
সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ডলার সংকট ও এলসি বন্ধ থাকায় বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে। তুরস্ক, আফগানিস্থান এলসি নিচ্ছে না। দুইটি দেশ থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় সরবরাহে ব্যঘাত ঘটছে।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবলু অভিযোগ করে বলেন, মসলার জন্য কোনো ব্যাংক এলসি নিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া ডলার রেটে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এলসি খোলা নিয়মিত রাখা না গেলে সংকট ঘনীভূত হবে।
তিনি বলেন, রমজানে গরম মসলার চাহিদা তেমন থাকে না। জিরা এবং এলাচের কিছুটা চাহিদা থাকে। যদি এলসি সংকট দুর করা না হয় তবে আগামী দুই মাস পর বড় সংকট দেখা দিবে। অনেক অসাধু বয়বসায়ী সব সময় সুযোগ খোঁজেন। তাদের সুযোগ না দিতে এলসি সংকট দুর করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্যারিফ কমিশন এবং ক্যাবকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানান তিনি।
এসময় ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, মসলার এলসির সমস্যা নিয়ে কাজ করা হবে। গরম মসলার মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে যে সকল সাজেশন এসেছে তা সুপারিশসহ একটি লিখিত প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।
এছাড়া ডিউটি ফি নির্দিষ্ট করে দেয়ার জন্য ট্যারিফ কমিশনের কাছেও সুপারিশ করবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।
ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশ্য করে সফিকুজ্জামান বলেন, প্রতিটি বাজারে মূল্য তালিকা নিশ্চিত করবে বাজার কমিটি। এক্ষেত্রে যেসব বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করা হবে না, সেক্ষেত্রে অধিদপ্তর উক্ত বাজার কমিটিকে বিলুপ্ত করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করবে।
ভোক্তা অধিকারের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ক্রয় ও বিক্রয়ের রশিদ রাখতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বাজার বিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘মশলার আমদানি ও বাজারজাতকরণে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ রাজস্ব দিতে হয়। ডলারের দাম বাড়লে রাজস্বও বাড়ে। ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে রাজস্ব নির্ধারিত করা উচিত।
এলসির বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী বলছেন তারা এলসি খুলতে পারছেন না। তবে অনেক ব্যাংকে অতিরিক্ত টাকা দিলে সহজেই এলসি খোলা যায় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এই অতিরিক্ত টাকার দায়ভারও কিন্তু ভোক্তাদের নিতে হয়। এ দিকে নজর দেওয়া জরুরী।