ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা।’
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-এ খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিতর্কিকদের বক্তব্য শুনে আমি অভিভূত। আমরা চমৎকার ও প্রাণবন্ত একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা উপভোগ করলাম। আমার মতে আজ এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দুই দলই বিজয়ী হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। আমাদের কাজে সরকারি অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংস্থা বিশেষত ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) উল্লেখযোগ্য ভাবে সহযোগিতা করছে। ব্যবসায়ীরাই আমাদের এই দেশকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক জিডিপিতে প্রাইভেট সেক্টরের একটা বড় অবদান রয়েছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সৎ ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় অধিদপ্তর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। ভোক্তারা যতদিন পর্যন্ত তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হবে ততদিন পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অধিদপ্তরের কাজের মূল্যায়ন এবং ক্ষেত্র বিশেষে সমালোচনা করা হবে। আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সমালোচনাকে স্বাগত জানাব কারণ সমালোচনা কাজের দুর্বল দিকগুলো দেখিয়ে দেয় এবং এই দুর্বল দিকগুলো নিরসনের মাধ্যমে অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘মিডিয়া আমাদের সমাজের দর্পণ এবং মিডিয়ার কল্যাণে আমাদের কার্যক্রম অনেক সহজে এবং দ্রুত সময়ে ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছে যাচ্ছে।’
এ জন্য তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালকগণ, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকগণসহ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, যেকোনো সৎ ব্যবসায়ীর জন্য এফবিসিসিআই সবসময় পাশে থাকবে এবং অসৎ ব্যবসায়ীর জন্য এফবিসিসিআই কখনই কোনো এ্যাডভোকেসি করবে না। কৃত্রিম সংকট যারা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পণ্যের সংকট সৃষ্টি ও বাজার অস্থিরতার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব। চাহিদা ও যোগানের সঙ্গে মিল রেখে সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
তিনি প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত এ বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতন হবে ভোক্তা এবং সুরক্ষিত হবে ভোক্তার অধিকার এ আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ১২/১৩টি সংস্থা বাজার মনিটরিং করে থাকে। তবে শুধু অভিযান পরিচালনা করে বা জেল জরিমানার মাধ্যমে বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের সংকটে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে সব সময় বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয় না। চাহিদা ও যোগানের তারতম্যের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অন্যদিকে অসাধু কারবারী, মজুতদার, কালোবাজারি, সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতা, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ভাড়া দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আমরা কোনো ভাবে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নই। তাঁরা বড় বড় পুঁজি নিয়ে বাজারে আসে। লাভ যেমন থাকে ঝুঁকিও তেমন থাকে। তাই ভ্যাট-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনাকে সহনীয় রেখে সরকারকে বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দিতে হবে।
আজ “বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী” শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষে ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ বিরোধী দল হিসেবে বিষয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিতর্ক করেন।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক আরিফুর রহমান, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা ও সাংবাদিক মো. শারফুল আলম।
ছায়া সংসদে বিরোধী দল হিসেবে বিষয়ের বিপক্ষের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষের দল বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
-এসআর