ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাজার সিন্ডিকেট প্রতিরোধ করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আরও ক্ষমতা চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এ জন্য ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনের সংস্কার চাইছে সংস্থাটি।
একই ধরনের সুপারিশ জানিয়ে সম্প্রতি সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও করণীয়’ সম্পর্কিত ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দুই ভাগ করার সুপারিশ করেছে। ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘ভোক্তা সম্পর্কিত’ একটি বিভাগ এবং বাণিজ্যনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরেকটি বিভাগ তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ভোক্তাস্বার্থ দেখতে ২০০৯ সালে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা আইনসহ আরও কয়েকটি আইন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরসহ রয়েছে নানা সংস্থা। ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় এসব সংস্থার সক্ষমতা সীমিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে অকার্যকর।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোক্তা-অধিকারের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া ক্যাবের প্রতিবেদনটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যে লক্ষ্যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা প্রতিযোগিতা কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো করা হয়েছিল- তা অর্জিত হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম বাজার পরিদর্শন ও কিছু জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাজার কারসাজির পেছনে জড়িত সিন্ডিকেট প্রতিরোধে এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা সীমিত।
চিনির দামের উদাহরণ দিয়ে সূত্রগুলো জানায়, চিনির মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পণ্যটির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও ওই দামে পণ্যটি বাজারে পাওয়া যায়নি। এমন কি দাম বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করে বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। আমদানি শুল্ক কমিয়ে সরকার পুনরায় দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দাম কার্যকর করেনি চিনি মিল মালিকরা। ফলে এই পণ্যটি আমদানিতে শুল্ক খাতে সরকার যে ছাড় দিয়েছিল তার সুবিধা পায়নি ভোক্তা সাধারণ। অসাধু সিন্ডিকেট সেই সুবিধা ঘরে তুলেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সামলাতে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধন জরুরি, যাতে করে পরিকল্পনা করে পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে কেউ অযথা মূল্য বাড়াতে না পারে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এ সম্পর্কিত আইন সংস্কারে বিভিন্ন পরামর্শ রয়েছে আইএমএফের। তবে সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সরকার নিজেও মনে করছে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়াগুলোর সংস্কার দরকার। সে লক্ষ্যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘ভোক্তাস্বার্থ রক্ষায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে আমরা পর্যালোচনা করছি।’
ক্যাবের সুপারিশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভোক্তার বিষয়গুলো দেখতে মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিভাগ করার আইডিয়া ভালো। অনেক মন্ত্রণালয়ে কাজের সুবিধার্থে পৃথক বিভাগ তৈরি হয়েছে। তবে এ ধরনের পৃথক বিভাগ করার জন্য জনবল নিয়োগ এবং প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা সময় সাপেক্ষ বিষয়।’
সৌজন্যে, বাংলাদেশ প্রতিদিন।