সচেতন না হলে ভোক্তা-অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না: ভোক্তা ডিজি

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোক্তা-অধিকার রক্ষায় অধিদপ্তর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। ভোক্তারা যতদিন পর্যন্ত তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হবে ততদিন পর্যন্ত ভোক্তা-অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ‘কেবল বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব নয়’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

যৌথ ভাবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পাশাপাশি সরকারের অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অধিদপ্তরের কাজের মূল্যায়ন এবং ক্ষেত্র বিশেষে সমালোচনা করা হবে। আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সমালোচনাকে স্বাগত জানাব কারণ সমালোচনা কাজের দুর্বল দিকগুলো দেখিয়ে দেয় এবং এই দুর্বল দিকগুলো নিরসনের মাধ্যমে অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বর্তমান সমাজে বিদ্যমান ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরে তা প্রতিরোধে অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘অধিদপ্তর মূলত তিন ধরনের কাজ করে থাকে। প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম হিসেবে বাজার তদারকি, প্রতিকারমূলক কার্যক্রম হিসেবে অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও খামারীদের স্বার্থ বিবেচনায় সময়ে সময়ে কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় আবার সে সকল পণ্য আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। দেশের বাজার ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার পলিসি গ্রহণ করে।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য (যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে দেয়) স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অধিদপ্তর কর্তৃক রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যায় পর্যন্ত তেল ও চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে একটি অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে এ সকল পণ্যের অবৈধ মজুদ শনাক্ত করা সহজ হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘মিডিয়া আমাদের সমাজের দর্পণ এবং মিডিয়ার কল্যাণে আমাদের কার্যক্রম অনেক সহজে এবং দ্রুত সময়ে ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছে যাচ্ছে।

এ জন্য তিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরকে একটি ভোক্তাবান্ধব ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করার জন্য সকলের সমন্বিত সহযোগিতা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ১২/১৩টি সংস্থা বাজার মনিটরিং করে থাকে। তবে শুধু অভিযান পরিচালনা করে বা জেল জরিমানার মাধ্যমে বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের সংকটে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে সব সময় বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয় না। চাহিদা ও যোগানের তারতম্যের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অন্যদিকে অসাধু কারবারী, মজুতদার, কালোবাজারি, সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতা, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ভাড়া দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। চিকিৎসাখাতে অবহেলা উত্তরণে একটি কমিশন গঠন অত্যন্ত প্রয়োজন।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র পক্ষ থেকে নিম্নের ১০ দফা সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো-

১. দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রকে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা।

২. বাজার মনিটরিং বা তদারকিতে শনাক্ত অসাধু ব্যবসায়ীকে তাৎক্ষনিক শাস্তির আওতায় আনার জন্য অধিদপ্তরকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা।

৩. মজুতদারি, সিন্ডিকেট ও কালোবাজারি চক্রকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে দৃশ্যমান শাস্তি প্রদানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

৪. বাজারে গ্রাহকের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের যোগান বা সরবরাহ নিশ্চিত করতে কর্পোরেট মনিটরিং সেল গঠন করা।

৫. বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরও বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৬. কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে অধিক উৎপাদনশীল ফসল ফলাতে সারাদেশের কৃষকদের সহায়তা করা।

৭. কল-কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা, নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বাধাহীন ভাবে আমদানি যেন করা যায়, সে দিকে খেয়াল রাখা। একইসঙ্গে নিত্যপণ্যের আমদানি যাতে নির্বিঘ্নে করা যায় তার জন্য ব্যবসায়ীদের ভ্যাট, ট্যাক্স সুবিধা প্রদানসহ এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৮. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সাপ্লাই চেইনসহ বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়ীদের ওপর কড়া নজরদারি রাখার ব্যবস্থা করা।

৯. দেশে সংরক্ষণের অভাবে বছরে ৩০ শতাংশ খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়। তাই পঁচনশীল খাদ্যপণ্য যেমন- আলু, মরিচ, বেগুন, পটলসহ বিভিন্ন সবজি যথাযথ সংরক্ষণের জন্য উপজেলাভিত্তিক হিমাগার স্থাপন করা।

১০. সরকারের মজুদ আইন অনুযায়ী- চাল, ডাল বা শস্যের ক্ষেত্রে কতদিন এবং কি পরিমাণ মজুদ করতে পারবেন। তা ফলাও করে প্রচার করাসহ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তাবায়ন করা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালকগণ, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকগণ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

ছায়া সংসদে সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বিরোধী দল হিসেবে বিষয়ের বিপক্ষে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ চ্যাম্পিয়ন হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক আবুল কাশেম, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় ও সাংবাদিক শাহ আলম খান।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

-এসআর