ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেছেন, সুযোগ পেলেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা হয়। যারা অস্থিরতা করে, অনিয়ম করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সবার যুদ্ধ চলবে।
শনিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ক এক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের সবার যুদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে যারা তিন টাকার লেবু একই মার্কেটে আট টাকায় বিক্রি করে। তেল মিল গেট থেকে ক্রয় করার পর প্রতিটি পর্যায়ে যারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে। ভোক্তারা যাতে স্বস্তিতে থাকে, সেজন্য আমাদের যা যা করার তা করব।
সভায় ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, আমরা সব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন তাদের পক্ষ নেবে না। ব্যবসায়ীরা যদি আজকে আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন তারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করবেন, কাল থেকে আমরা বাজারে অভিযানে যাব না।
তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনে ঘাটতিজনিত কারণে অস্বস্তিকর বাজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোক্তা সাধারণ যাতে সহনীয় এবং ন্যায্যমূল্য পণ্য ক্রয় করতে পারেন এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে।
ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার আমরা অনেক আগে থেকেই ট্র্যাক করছিলাম। প্রতি মাসে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা দেড় লাখ টন। রমজানে আড়াই থেকে পৌনে তিন লাখ টন লাগে। চাহিদার তুলনায় দেশে ভোজ্যতেল তেল থাকা সত্ত্বেও এর বাজার অস্থির হয়ে যায়। ১৬ মার্চ ডিউটি প্রত্যাহার করার আগেই কারা বাজার অস্থির করেছে তা অনুসন্ধান করেছি আমরা। খুচরা থেকে মিলার সবাই সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়েছে। রিফাইনারিগুলোতেও আমরা অভিযান চালিয়েছি। সেখানেও কিছু অনিয়ম পেয়েছি। তবে এখন থেকে তারা আমাদের কথা দিয়েছে উৎপাদন অব্যাহত রাখবে। সাপ্লাই অর্ডারে (এসও) দাম উল্লেখ থাকবে। এছাড়া এখন থেকে ডিলাররা ছাড়াও মিল গেট থেকে যেকেউ মিলের দামে ভোজ্যতেল কিনতে পারবে। পাশাপাশি আমরা একটি অ্যাপস করছি। যেখানে তেল আমদানি থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত সব তথ্যের লাইভ আপডেট থাকবে।
অনুষ্ঠানে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কোভিড অতিমারির দুই বছর ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য পৃথিবীব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন নতুন করে লকডাউন দেওয়ার কারণে তৈরি পোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা জরুরি। বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র মিল রয়েছে। কাজেই আমদানি উৎসাহিত করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে ফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানি করা যায়। এছাড়া ডিউটি স্তর সামঞ্জস্য করা হলে আমদানি বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমান সংকট কেটে যাবে।
তিনি বলেন, পাইকারি ও খুচরা সবক্ষেত্রে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা প্রকাশ এবং উভয়ের মধ্যে দামের পার্থক্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও প্রশাসনসহ সবাই সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। মিল গেটে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয়সহ এসও, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে জোরদার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কাজ করার কথা জানান তিনি।