তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছেন কোভিড আক্রান্ত শাহনাজ বেগম। মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা ৫০-ঊর্ধ্ব এ নারীর অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গেছে চল্লিশ শতাংশের নিচে। চিকিৎসকের পরামর্শ আইসিইউতে ভর্তি করার। মুন্সিগঞ্জে কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও তাকে ভর্তি করাতে পারেননি স্বজনরা।
অবশেষে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। কিন্তু এখানেও আইসিইউ সংকটের কারণে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটাছুটি। প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে, তারপর সবচেয়ে বেশি আইসিইউ সক্ষমতার কোভিড ডিএনসিসি হাসপাতালে। কিন্তু দুই হাসপাতাল গিয়েই হতাশ হতে হয় স্বজনদের।
শাহনাজ বেগমের ছেলের প্রশ্ন, ‘এভাবে কি আমরা রোগী নিয়ে ঘুরতেই থাকবো অ্যাম্বুলেন্সে করে! যদি এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে আমাদের দৌঁড়াতে হয়, তাহলে রোগীকে বাঁচাবো কী করে! আমরা এখন কী করবো?’
অন্যদিকে, সপ্তাহখানেক ধরেই কোভিডের নানা উপসর্গে ভুগছেন রাজধানীর কাউলার বাসিন্দা ৫০-ঊর্ধ্ব আরেক নারী করুনা বেগম। দুইদিন আগে ভর্তি করা হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল ছাড়াও আরও কয়েক সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ’র খোঁজ করেন তার স্বজনরা। কিন্তু কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ ফাঁকা না পেয়ে শুক্রবার সকালে তাকে নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছোটেন স্বজনরা।
করুনা বেগমের মেয়ে বলেন, সরকারিতে খোঁজ করছি। আইসিইউ ফাঁকা নেই কোথাও। একটা প্রাইভেটে পাওয়া গেছে। অনেক টাকা খরচ পড়ে যায়। এখন কী করার! মাকে তো বাঁচাতে হবে। এখন সামর্থ্য না থাকলেও টাকা জোগাড় করে মাকে বাঁচাতে হবে।রাজধানীর কোভিড হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নিয়ে এমন হাহাকার এখন অনেকেরই নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে অনেক রোগীকে সংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউ শয্যার আশায় রাজধানীতে আনা হলেও হতাশ হতে হয় স্বজনদের।
দিন দিন এভাবেই করুণ হয়ে উঠছে রাজধানীর কোভিড হাসপাতালগুলোর পরিবেশ। কোভিড আক্রান্ত হয়ে প্রিয়জন হারানোর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে একের পর এক পরিবার।একদিকে স্বজন হারানো শোকার্ত মানুষের কান্না-আর্তনাদ। অন্যদিকে শয্যাসহ নানা সংকটের ধকলে চাপা হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু এখন রাজধানীর কোভিড হাসপাতালগুলো। কোনো কোনো হাসপাতালে সাধারণ বেডেই ভর্তি আছেন ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী। তাই আইসিইউ দূরে থাক, সাধারণ শয্যার খোঁজেই দিশেহারা হতে হচ্ছে অনেক কোভিড রোগীর স্বজনদের।
গাজীপুর থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল ২৮ বছর বয়সী এক কোভিড রোগীকে। তার মা বলেন, ‘আমার ছেলের জ্বর, শ্বাসকষ্ট। শ্বাস নিতেই পারছে না। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বলতেছে, সিট খালি নাই। তাই ভর্তি করতে পারছি না। এখন আমার ছেলের চিকিৎসা করবো কিভাবে!’কুর্মিটোলা জেনারেল ও ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে গিয়েও কোভিড আক্রান্ত এক নারীকে ভর্তি করতে না পেরে স্বজনরা বলছেন, ‘উনারা প্রাইভেট ক্লিনিক দেখাচ্ছে। আমরা তো প্রাইভেটে যেতে পারবো না বলেই এখানে আসছি।’
দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগী চাপ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। প্রতিষ্ঠানটির শঙ্কা, সংক্রমণ রাশ টানতে না পারলে হাসপাতাল পরিস্থিতি আরো নাজুক হতে পারে।অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, রোগীর সংখ্যা যদি বাধাহীনভাবে বেড়ে যেতে থাকে, সেটি তো নিশ্চয়ই আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো দেশের পক্ষেই সহজ কোনো কাজ নয়।