ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: আগে থেকেই আটার দামে বইছে হাওয়া। সেই হাওয়া এখন আরও জোরেশোরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আটা কেজিতে বেড়েছে সাত থেকে আট টাকা। চালের বাজারও নেই স্থির। বাড়ছে ধাপে ধাপে। এক কেজি চাল কিনতে গড়ে এক থেকে দুই টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাকে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করতে পারে বাজারে- এমন খবর ছড়িয়ে দিয়ে চিনির দামটাও অচেনা করার চেষ্টা চলছে। দু’দিনেই চিনি কেজিতে বেড়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা। আমদানি রসুনও বেড়েছে আরেক দফা। এই মসলা পণ্যের লম্ম্ফ কেজিতে ২০ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ছে। টানা ১০ দিন ধরেই বাড়ছে চালের দাম। আর ভারত রপ্তানি বন্ধ করবে- এমন খবরে চিনির দাম বেড়েছে। আরও বাড়তে পারে- এমন ইঙ্গিতও দিচ্ছেন ডিলাররা।
চালের দরে লাগাম নেই :এখন চলছে চালের ভরা মৌসুম। অন্য সময়ের চেয়ে বছরের এই সময়ে চালের দাম কিছুটা কম থাকে। তবে চালের বাজারের বাস্তবতা ভিন্ন। খুচরা পর্যায়ে মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৬২ থেকে ৬৬ টাকা। বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতীয় চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। এই মানের চাল এক সপ্তাহ আগে কেনা গেছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায়। স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা মোটা চালের (স্বর্ণা ও গুটি জাতের) দামও বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। ব্যবসায়ীরা মোটা চালের কেজি বিক্রি করছেন ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায়, যা এত দিন কেনা যেত ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়।
ভরা মৌসুমেই চালের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় খোদ পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও রয়েছে আলোচনা। তাঁরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় হাওরাঞ্চলে ধান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে এক ধরনের প্রভাব পড়ছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ইসমাইল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, মিলাররা দু’দিন ধরে চালের অর্ডার নিচ্ছে না। কেন নিচ্ছে না- এর সঠিক তথ্যও দিচ্ছে না তারা। এ নিয়ে পাইকাররা উদ্বিগ্ন।
পাইকারদের এই অভিযোগ সত্য বলে জানান নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, দেশে মোট উৎপাদনের প্রায় ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ হয় হাওরাঞ্চলে। এ বছর বন্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার নির্দেশ দিয়েছিল, যেসব ধান অন্তত ৮০ শতাংশ পেকেছে, সেগুলো যেন কাটা হয়। ওখানেই ২০ শতাংশ ধান নাই হয়ে গেছে। এ ছাড়া বৃষ্টি বেশি হওয়ায় অনেকেই কাঁচা ধান কেটে ফেলেছে। এ কারণে সাধারণত প্রতি হেক্টরে দুই থেকে আড়াই টন ধান উৎপাদন কম হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হওয়ার কারণে ধানের ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আধাপাকা ধান কেটে ফেলায় ছিটা বেশি হয়েছে।
নিরোধ চন্দ্র সাহা বলেন, যারা ১৫ দিন আগে চালের অর্ডার দিয়েছে, তাদের এখনও চাল দেওয়া যায়নি। অনেক বেশি ক্রেতা আসার কারণে কিছুটা জট লেগে গেছে। কারণ, বিশ্ববাজারে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে- এই শঙ্কা থেকে বিত্তশালীদের অনেকেই অতিরিক্ত চাল কিনছেন।
আটার দাম আরও চড়া :ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার দুই দিনের মাথায় বাজারে এক দফা দাম বেড়েছিল আটা ও ময়দার। তবে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করলেও বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধ করবে না। অন্যদিকে সরকার টু সরকার যেসব গম আমদানির জন্য চুক্তি করেছিল, সেগুলোও যথাসময়ে আসবে বলে সরকার নিশ্চিত করেছে। এরপরও বাজারে আরেক দফা দাম বেড়েছে আটার। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে খোলা আটার দাম ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। পাঁচ দিন আগেও খোলা আটার কেজি ৪০ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ভারতের রপ্তানি ঘোষণার ঠিক দু’দিনের মাথায় খোলা আটার দাম বাড়লেও প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছিল পাঁচ থেকে ছয় দিন পর। তখন ব্র্যান্ডভেদে প্যাকেটজাত দুই কেজি আটা ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা হয়েছিল। সেই দাম আরও বেড়ে হয়েছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা।
দুই কারণে চিনির বাজার ঊর্ধ্বমুখী :নিজ দেশে বাজার স্থির রাখতে গমের পাশাপাশি চিনিও রপ্তানি বন্ধ করতে পারে বলে আভাস দিয়েছিল ভারতের গণমাধ্যমগুলো। এতে দেশের চিনির বাজারও নাচছে। দু’দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পাঁচ টাকা বেড়েছে খোলা চিনির দাম। বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, যা দু’দিন আগে কেনা যেত ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। তবে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার কিছু সময়ের জন্য চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছিল। গত ১৫ মে সেই মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবার শুল্ক্ক ৩০ শতাংশ বহাল হয়েছে। এ ছাড়া ভারত ঘোষণা দিয়েছে, শিগগিরই তারা চিনি রপ্তানি বন্ধ করবে। এ দুই কারণে চিনির দাম বাড়ছে।
এদিকে, দেশে উৎপাদিত চিনির দাম সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলছে, তাদের এক কেজি চিনির প্যাকেটে সর্বোচ্চ দাম ৮৫ টাকা লেখা রয়েছে। সেই দর মুছে ব্যবসায়ীরা তাতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দামের সিল মেরে বিক্রি করছেন। এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।
আরও বেড়েছে রসুনের দর :ঈদের সপ্তাহখানেক পর হঠাৎ বেড়েছিল রসুনের দাম। আমদানি করা ১১০ থেকে ১২০ টাকার রসুন হয়েছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। দু’দিনের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম আরেক দফা বেড়েছে। কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। এ ছাড়া দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়, যা ১০ দিন আগে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।