নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গিকার পুনরাব্যক্ত করেছে।
রবিবার কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর অফিস পরিদর্শন এবং মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থেকে এই অঙ্গিকারের পুনরাব্যক্ত করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজের ধারা ও ক্ষেত্রে বাজার তদারকির কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে ক্যাবের সমর্থন পাওয়া জরুরী।
এ বিষয়ে ক্যাবের পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি জাতীয় কমিটির আহবায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, নবীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে অধিদপ্তরের রাতারাতি অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। এর জন্য ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে।
মতবিনিময় সভায় ক্যাব এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এবং উপ-পরিচালক আফরোজা রহমান।
ক্যাব এর পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মো: মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান।
অধিদপ্তরের মহা পরিচালক তার বক্তব্যে বলেন, ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় ক্যাব এর ৪৪ বছরের অব্যহত প্রচেষ্টা এবং সরকারের পক্ষে অধিদপ্তরের কাজের লক্ষ্য অভিন্ন। তাই এই ব্যাপারে পারস্পারিক সমর্থন ও সহযোগীতার জন্য এই ধরনের মতবিনিময় অব্যাহত থাকবে।
ক্যাব এর সাথে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্পর্ক নিয়ে এম সফিকুজ্জামান বলেন, ক্যাব এবং ভোক্তা অধিকার একে অন্যের সম্পূরক। আমরা তো কাজ করছি, আমাদের সঙ্গে ক্যাব একসাথে কাজ করলে গতি আরও বাড়বে। দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে আমরা সহজে পৌঁছাতে পারবো না কিন্তু ক্যাব ১৮ কোটি ভোক্তার কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন। ক্যাবের মাধ্যমে আমরা ভোক্তার তথ্য সরাসরি পেয়ে থাকি। আমরা এক সঙ্গে কাজ করছি আগামীতেও করবো।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ২০০৯ সালের চলমান আইনের পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। নতুন আইনে ই-কমার্স এবং শাস্তির বিধান দিগুন করা হচ্ছে বলে জানান ডিজি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, অধিদপ্তরের ২০০৯ সালের চলমান আইনে আমাদের কার্যক্রম চলবে। তবে নতুন আইন জাতীয় সংসদে পাশ হবার পর নতুন আইনে কাজ শুরু করবো।
এম সফিকুজ্জামান বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিদপ্তর। বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবসায়ীদের অর্থদণ্ডের মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। তবে নতুন আইনে শুধু অর্থদণ্ড নয়, কঠোর শাস্তির জন্য প্রক্রিয়া চলছে। অর্থাৎ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন বাজারে যেসব ব্যবসায়ী সংগঠন আছে, সেই সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা যা বলে পরবর্তীতে তারাই সেগুলো মানে না। নিজেরাই নিজেদের করা প্রতিশুতি ভঙ্গ করে। আমরা অভিযানে অনেক ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিষ্ঠানেও অনিয়ম পেয়েছি। এবং তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
ভোক্তার ডিজি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান অনেক ব্যবসায়ী মেনে নিতে পারছে না। তারা এই অভিযানের বিরোধীতা করছে। অনেকেই এই অভিযানকে বেআইনি বলছেন। কিন্তু ভোক্তা অধিকারের অভিযান বেআইনি নয়। আইন মেনেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যতই চাপ আসুক এই অভিযান অব্যহত থাকবে। ভোক্তার অধিকার যেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানেই কাজ করবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বৈধ। আমাদের কার্যক্রমের সঙ্গে দেশের জনগণ আছে, ক্যাব আছে এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারাও আছেন।
সার্ভিস সেক্টরে অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই মনে করেন আমরা শুধু বাজারে বা দোকানে অভিযান চালাই। আসলে তা ঠিক নয়, আমরা সার্ভিস সেক্টরেও অভিযান শুরু করবো। এই সেক্টরে ভোক্তারা আরও বেশি প্রতারিত হচ্ছে। বড় ধরনের অনিয়ম চলছে। এ বিষয়ে সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রণায় ভোক্তা অধিদপ্তরকে আরও দায়িত্ব দিচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরকে আরও ডিজিটালাইজেশন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরে কিছু পরিবর্তন আনতে চাই। আরও ডিজিটাল করতে চাই। ভোক্তা যাতে সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং সেবা নিতে পারে।
ভোক্তা অধিকারের অভিযানে কোন কাজ হচ্ছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, আমরা যে অভিযান করছি তা না করলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতো। আমাদের অভিযানে আমি মনে করি কাজ হচ্ছে। পরিপূর্ণ সচেতন হতে আরও সময় লাগবে।
তিনি বলেন, আমার কাছে কোনো জাদুর বাঁশি নেই, যে ফু-দিব আর সব সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে। এর জন্য সময় দিতে হবে। আমরা সব সেক্টরেই যাব।
আরইউ