ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে (Omicron) আক্রান্তদের শরীরে বিশেষ কোনো উপসর্গ ছাড়াই মৃদু রোগ দেখা দিতে পারে। শনিবার দেশটির মেডিক্যাল সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি রুশ বার্তাসংস্থা স্পুটনিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার নতুন প্রজাতিকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। সংস্থাটি বলেছে, করোনার নতুন ধরনটির স্পাইক প্রোটিনে ৩২ বার রূপ বদল ঘটেছে। সাধারণত ভাইরাসের এ ধরনের বারবার রূপ বদল সেটিকে আরও বেশি সংক্রামক এবং বিপজ্জনক করে তোলে।
গ্রিন বর্ণমালার ১৫ নম্বর অক্ষর অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ওমিক্রন’ নাম দিয়েছে।
কোয়েৎজি বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টটি মৃদু রোগের উপসর্গের সাথে সাথে মাংসপেশীর ব্যথা এবং এক অথবা দু’দিন পর্যন্ত ক্লান্তির বোধ তৈরি করতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত যাদের শরীরে এই ধরনটি শনাক্ত করেছি, তাদের স্বাদ বা গন্ধ চলে যায়নি। তবে তাদের হালকা কাশি হতে পারে। এর বিশেষ কোনো উপসর্গ নেই। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের কয়েকজন বর্তমানে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন, দেশের হাসপাতালগুলো এখনও ওমিক্রন রোগীতে উপচে পড়েনি। টিকা নেওয়া লোকজনের মাঝে নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়নি। তবে একই সময়ে টিকা না নেওয়া লোকজনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।
অ্যাঞ্জেলিক কোয়েৎজি বলেছেন, আমরা কেবলমাত্র দুই সপ্তাহ পর এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারবো। হ্যাঁ, এটি সংক্রমণযোগ্য; কিন্তু আপাতত চিকিত্সক হিসাবে আমরা জানি না, কেন এটি নিয়ে এত হইচই শুরু হয়েছে। কারণ আমরা এখনও এই ধরনটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি নাই।
তিনি বলেন, আমরা কেবলমাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে জানতে পারবো। কিছু রোগী এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তারা বয়সে তরুণ। তাদের কারও বয়স ৪০ এবং কারও তারচেয়ে কম।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিশ্বের কিছু দেশের বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন দেশটির এই চিকিৎসক। এখনও এই ধরনটি কেমন বিপজ্জনক সে বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি, তার আগে দেশটির সঙ্গে ফ্লাইট নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ইসরায়েল, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কিছু দেশ ও অঞ্চল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওই অঞ্চলের কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ডব্লিউএইচওর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যে কয়েকটি ধরন শনাক্ত হয়েছে; তার মধ্যে ওমিক্রনের ‘রি-ইনফেকশন’ বা পুনরায় সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। অর্থাৎ—কেউ একবার এই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও ফের একই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সিকোয়েন্সিং প্ল্যাটফর্মের পরিচালক তুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ এর রূপ বদলে ফেলার গতি-প্রকৃতি অত্যন্ত অস্বাভাবিক। এই ভ্যারিয়েন্টটি ইতোমধ্যে ৩০বারের বেশি মিউটেশন ঘটিয়েছে তার স্পাইক প্রোটিনে।
সাধারণত সব ধরনের ভাইরাসই সময় এবং প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর নির্ভর করে নিজের রূপ বদলে ফেলে। অনেক সময় এই রূপ বদল তেমন কোনো প্রভাব না ফেললেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শক্তিশালী রূপে হাজির। ওমিক্রনের অস্বাভাবিক এই রূপ বদল সেই শঙ্কাই বাড়িয়ে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক মহামারিবিদ ও জীবাণু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েকবার রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কারণে ওমিক্রন ধরনটি টিকাপ্রতিরোধী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিরাও এই ধরনটির দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।