করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল পর্যায়ে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ক্রমাগত কমে আসায় সংক্রমণ পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল পর্যায়ে’ রয়েছে বলে দাবি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট প্রকোপের পর এশিয়া ও ইউরোপের নানা দেশে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট এওয়াই. ৪.২ এর প্রকোপও দেখা গেছে। তাই সংক্রমণ পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল’ বলে দাবি করলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, নতুন ভেরিয়েন্টের প্রবেশ ঠেকাতে দেশের প্রতিটি বিমানবন্দর-স্থলবন্দর ও নৌবন্দরগুলোতে আগত যাত্রীদের পরীক্ষার কার্যক্রম জোরদার করছে তারা।

বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও অসংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল বুলেটিনে নানা তথ্য উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বলব, আমরা যথেষ্ট স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছি। সারা বিশ্বে ২৫ কোটিরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, ৫০ লাখ ৫৪ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পরিস্থিতির সঙ্গে বা পাশের দেশ ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে তুলনা করলেও দেখা যাবে কেন আমরা এগিয়ে আছি। কেবল মৃত্যুর সংখ্যা দিয়েও তো বোঝা যায়, একটা দেশ করোনা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।

দাবির স্বপক্ষে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘ভারতে প্রতি লাখে মারা গেছেন ৩৩ জন, থাইল্যান্ডে ২৮ জন, নেপালে ৩৯ দশমিক ৩১ জন, শ্রীলঙ্কায় ৬৪ জন। সেখানে বাংলাদেশে প্রতি লাখে মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ৯৪ জন। গত ৭ দিনে ভারতে মারা গেছেন ২৫০০ জন, থাইল্যান্ডে ৪০০ জন, সেখানে বাংলাদেশে গত ৭ দিনে ৩১ জন মারা গেছেন। টেস্ট ও পজিটিভ রোগীর সংখ্যার দিক থেকেও বাংলাদেশ এদের চেয়ে উন্নত অবস্থানে আছে। তাহলে আমরা বলতেই পারি, বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে।’

চলতি মাসের শুরু থেকে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর পজিটিভ রোগীর সংখ্যা র কিছুটা বেড়েছে। ‘স্থিতিশীল’ পরিস্থিতির মধ্যেও নতুন ভেরিয়েন্টের প্রকোপের আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্ক অবস্থানেই থাকতে বলছে দেশবাসীকে।

ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য হল, তার কোনো ভেরিয়েন্ট যদি এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকে, তবে সেটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন যে স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে, তাতে ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে নতুন কোনো ভেরিয়েন্ট আসলে পরিস্থিতি কিন্তু বদলে যাবে। তাই সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর থেকে আমরা দেখছি সংক্রমণের হার ১ থেকে ১ দশমিক ৩ এর মধ্যে থাকছে। যদি আরও ২-৩ সপ্তাহ আমরা এমন হার ধরে রাখতে পারি বা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যদি শূন্য হয়ে যায়, তাহলে কেবল আমরা বলতে পারব, কোভিড পরিস্থিতি আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’

করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট এওয়াই. ৪.২ এর প্রবেশ ঠেকাতে বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, নৌ বন্দরে স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করার কথা জানিয়ে রোবেদ আমিন বলেন, এসব স্থানে নিরাপত্তা ও স্ক্রিনিং কার্যক্রমে আমাদের আরও কঠোর হতে হবে।

করোনাবিষয়ক ভার্চুয়াল বুলেটিনে দেশের হাসপাতাল পরিস্থিতি, ভ্যাকসিনের মজুদ ও অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান রোবেদ আমিন।

তিনি জানান, সরকারের কাছে এখন ৩০ হাজারের বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার, আড়াই হাজার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ২ হাজারের বেশি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে সি-প্যাপ, বাই-প্যাপ সাপোর্ট রয়েছে। ১১৮টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম চালু রয়েছে।

ঢাকা মহানগরীতে ৩ হাজার ৬৫৯টি কোভিড সাধারণ শয্যার মধ্যে ৩ হাজার ২৩২টি শয্যা খালি, ৩৮৮টি আইসিউ শয্যার মধ্যে ৩২৮টি খালি, এইচডিইউ ৪২৭টি শয্যার মধ্যে ৩৯৩টি খালি। এছাড়া সারাদেশের অন্যান্য হাসপাতালে ১৩ হাজার ৯৬৬টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১২ হাজার ৯৯২টি শয্যাই এখন খালি।

বাংলাদেশ এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

ভ্যাকসিনের মজুদ নিয়ে রোবেদ আমিন বলেন, সরকারের কাছে এখন আড়াই কোটির মতো ভ্যাকসিন রয়েছে। ভ্যাকসিন পেতে এ পর্যন্ত ৬ কোটিরও বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে ৪ কোটি ৯১ লাখ ১৪ হাজার ৪৬২ জনকে প্রথম ডোজ ও ৩ কোটি ২০ লাখ ৬৩ হাজার ৫১৫ জনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘২-৩ মাসের মধ্যে আমরা আরও ১০ কোটি ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো। ভ্যাকসিন পাওয়ামাত্রই আমরা দ্রুত গতিতে বিভিন্ন বয়সী মানুষদের টিকা দিয়ে দেব।’