ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় গম রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছে ভারত। তবে নিষেধাজ্ঞা জারির আগে গত ১৩ মে অথবা তারও আগে গমের যেসব চালান ভারতের শুল্ক দপ্তরের কাছে পরীক্ষার জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে এবং নথিভুক্ত হয়েছে, সেসব চালান বিদেশে পাঠানো যাবে।
মঙ্গলবারের বিবৃতিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, মিসরীয় সরকারের অনুরোধে গমের একটি চালান দেশটি পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গমের এই চালান ইতোমধ্যে কান্দালা বন্দরে লোড করা হচ্ছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, গম রপ্তানির আকস্মিক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার কারণে ভারতের কিছু বন্দরের বাইরে হাজার হাজার গমবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। এসব ট্রাক আটকে পড়ায় বিধি-নিষেধ শিথিল করার এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেইন ট্রেডের (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকার দেশের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং প্রতিবেশি ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর চাহিদা পূরণের জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের রপ্তানির জন্য ইতিমধ্যে যেসব ঋণপত্র ইস্যু করা হয়েছে এবং যেসব দেশ খাদ্যনিরাপত্তার জন্য রপ্তানির অনুরোধ জানিয়েছে, সেই দেশগুলোতে এখনও গম রপ্তানির অনুমতি দেবে নয়াদিল্লি। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে গম রপ্তানির বিধি-নিষেধ প্রযোজ্য হবে না।
এর পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সরকারের অনুরোধেও গম রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। গম রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে প্রধান তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে।
এই তিন লক্ষ্য হলো, ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন অন্যান্য দেশকে সহায়তা এবং সরবরাহকারী হিসেবে ভারতের নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা। গমের সরবরাহের মজুদ রোধে বাজারে একটি স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদানও এই আদেশের লক্ষ্য ছিল বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
গত ১৩ মে ভারত গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় বিশ্ববাজারে এই খাদ্যশস্যের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার মাঝেই ভারতের রপ্তানি নিষিদ্ধের এই ‘সুরক্ষাবাদী’ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বের উন্নত সাত দেশের জোট জি৭ কড়া সমালোচনা করেছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী ভারত বলেছে, ‘ব্যবসায়ীরা কেবল সরকারি অনুমোদন নিয়ে নতুন রপ্তানি চুক্তি করতে পারবে।’ ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দরিদ্র এই দেশটিতে মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে গমের দাম বেড়েছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তা কোনও কোনও এলাকায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে রোববার দেশটির বাণিজ্যসচিব বিভিআর সুব্রাহ্মনিয়াম জানিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক দাম বৃদ্ধির কারণে দেশটির কিছু কৃষক সরকারের কাছে গম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা ব্যবসায়ীদের কাছে এই খাদ্যশস্য বিক্রি করছে।
এর ফলে সম্ভাব্য যেকোনও দুর্ভিক্ষ এড়াতে এবং মহামারিতে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া লাখ লাখ পরিবারকে সহায়তার লক্ষ্যে ২ কোটি টন গম মজুতের পরিকল্পনা নিয়ে দেশটির সরকার চিন্তিত।
বিভিআর সুব্রাহ্মনিয়াম বলেছেন, গম অনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় রপ্তানি অথবা মজুত করা হোক আমরা সেটি চাই না। বরং ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা আছে, এমন দেশে সরকারের অনুমতি নিয়ে গমের রপ্তানি করা যাবে।