ঢাকা, ২৫ মে শনিবারঃ কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করা গেলেও দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমেছে। এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও সরকারী কম মূল্যে ধান কেনার ঘোষণা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের বিভিন্ন কারসাজিতে মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের মূল্য নিয়ে কৃষকদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়। দেশজুড়ে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনার মাঝে সরকার চাল আমদানির ঘোষণা দেয়।চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টনের অধিক চাল আমদানি হয়েছে। তবে, আমদানি নিরুৎসাহিত করতে গত ২২ মে বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপণে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই প্রজ্ঞাপনে, পূর্বের মোট শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ৫৫ শতাংশ করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চালের ওপর বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ বহাল রেখে রেগুলেটরি ডিওটি ৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করেছে। একই সঙ্গে এসব পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করেছে।
ঢাকার বিভিন্ন চালের আড়তে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ‘ডিলাররা তাদের পছন্দ মতো কৃষি বিভাগের কার্ডধারী কিছু কৃষকের কাছ থেকে কার্ডগুলো নিয়ে নেন। কৃষি বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ও রাজনৈতিক প্রভাবে ওইসব কৃষকের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে মর্মে তালিকা বানিয়ে খাদ্য বিভাগকে চাল সরবরাহ করেন ডিলাররা। ফলে সরকারি পর্যায়ে চাল সংগ্রহের সুফল থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।’
কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেলেও দেশের বিভিন্ন মোকাম ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, সর্বশেষ ২৪ মে পর্যন্ত খোলাবাজারে এক মাসের ব্যবধানে মানভেদে চালের দাম কেজি প্রতি ২ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তাঁদের দেয়া তথ্য অনুসারে, চালের দাম তিন বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। মোটা চালের দর ২৪ শতাংশ কমেছে। মাঝারি চালের দাম ১০ শতাংশ কমেছে। সরু চালের দামও প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। টিসিবির বাজার দরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বোরো মৌসুমে বন্যার ফলে ধানের উৎপাদন ঘাটতি হয়। তখন মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এর পরে চাল আমদানি বাড়লেও ৪৮ টাকা কেজিতে মোটা চাল বেচাকেনা হয়। ২০১৮ সালে বোরো মৌসুমের এই সময়ে মোটা চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। পরে গত আমন মৌসুমে চালের সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম কিছুটা কমে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় নেমে আসে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে, প্রতি কেজি গুটি ও স্বর্ণা নতুন চাল ৩০ টাকা এবং পুরনো গুটি ও স্বর্ণা ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। এক সপ্তাহ আগেও গুটি ও স্বর্ণা চাল ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া এখন বিআর আটাশ নতুন চাল ৩৫ টাকা এবং পুরনো চাল ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। তাছাড়া মানভেদে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি মিনিকেট চালের দাম কমে ৩৮ থেকে ৫০টাকায় নেমেছে। এবারই প্রথম দেশের শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার পর উল্টো চালের দাম কমেছে।