এস এম রাজিব: চড়া দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে রাজধানীর চালের বাজার। সরকারের অভিযানের পর চালের দাম কয়েক দিন যাবৎ না বাড়লেও কমতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে অভিযান ও মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ভোক্তারা।
রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মোটা চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা। যদিও সরকার খুচরা বাজারের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ৪৭ থেকে ৫০ টাকা।
রাজধানীর একটি হোটেলে মেসিয়ারের কাজ করেন মো. দেলোয়ার মোল্লা। কারওয়ান বাজার থেকে দৈনন্দিন বাজার করে থাকেন তিনি।
বাজারের বর্তমান পরিবেশের কথা জানিয়ে ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘গত রমজান মাসে আটাশ চাল ছিল ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৪০০ টাকা। আর এখন নিচ্ছে দুই হাজার ৬৫০ টাকা। আর হোটেলের জন্য তখন মিনিকেট কিনতাম তিন হাজার ৪০০ টাকা আর এখন নিচ্ছে তিন হাজার ৬০০ টাকা। এতো দাম নিচ্ছে কেন? আর এভাবে দাম বাড়লে আমরা কিভাবে চলবো।’
আরেক ক্রেতা মোমিন হাওলাদার বলেন, ‘চালের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে আমাদের চলাই মুশকিল। সরকারের এটা দেখা দরকার- কেন এতো দাম বাড়ছে। আগে মোটা চাল ৪৬ টাকা এবং চিকন চাল ৫৫ টাকা ছিল। কিন্তু এখন মোটা চাল ৫৬ টাকা এবং চিকন চাল ৬৫ টাকা করে নিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, দোকানে ১০ টাকার রুটি এখন ১৫ টাকা নিচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ লোকেরা কিভাবে চলবে। আমাদের আয় কই। আমাদের মতো লোকের তো বিপদ। সরকার তো সব দেখতেছে, সরকার যদি নজর রাখে, মনিটরিং করে তাহলে নিয়ন্ত্রণে আসে। তাই সরকারের কাছে দাবি, আমাদের মতো জনগণকে বাঁচান। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান পোদ্দার বলেন, ১৫ দিন যাবৎ চালের দাম বাড়ছে, কমার কোন লক্ষণ দেখছি না। তবে সরকার পদক্ষেপ নেয়ার পর দুই/তিন দিন ধরে দাম আর বাড়ছে না। সরকার যদি পদক্ষেপ নেয় তাহলে বাজার দর স্থিতিশীল থাকবে।
তিনি আরও বলেন, চালের দাম বাড়ার জন্য কর্পোরেট কোম্পানিগুলো দায়ী। কারণ আমরা যে মিনিকেট চাল ৬৫ টাকায় বিক্রি করি ওরা তা প্যাকেট করে ৭৫ টাকা নেয়। কিন্তু একটা প্যাকেটের খরচ কয় টাকা পড়ে। বেশি দামে বিক্রির কারণে বেশি দামেই (ধান) কিনছে। যার কারণে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দাম এখন আর বাড়ছে না। তবে চাল তো আর আজকে কিনে এনে আজকে বিক্রি করছি না। ৭/১০ দিনের চাল একবারে আনি। এই চাল শেষ হলে নতুন চাল আনবো। তখন বোঝা যাবে চালের দাম কেমন ধরে। আর এর জন্য সপ্তাহখানেক লাগবে। তবে মনে হচ্ছে দাম কমবে।
এ সময়ে চালের দাম বাড়ার কারণকে তিনি ‘সংশ্লিষ্টদের কারসাজি’ বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি মো. নাজের হোসাইন বলেন, ‘মিল মালিক, চাল ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট হাউজের সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম বেড়েছে। তাই সিন্ডিকেট বন্ধের জন্য আমদানি ব্যবস্থা ওপেন করে দিতে হবে এবং মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। কোথায় কারা কারা মজুদ করেছে, তাদের বিষয়ে তালিকা করে খোঁজখবর নিতে হবে। অবৈধ মজুদদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তর থেকে যে অভিযান পরিচালনা করছে তা লোক দেখানো। তাদের দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করছি না। আমরা (ভোক্তাদের স্বার্থে) দাবি জানালে সরকার গ্রহণ করে না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কোন দাবি করলে মেনে নেয়।’
গত মাসের মাঝামাঝি থেকে হুট করেই চালের দাম বাড়তে থাকে। ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম কেজিতে ৭/৮ টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা।