আমাদের দেহটাকে একটি ইঞ্জিনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ইঞ্জিন জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়েই চলে। আমাদের দেহের সব ধরনের কাজের জন্যই শক্তি দরকার হয়, আর এ শক্তি আসে আমাদের খাওয়া খাদ্য থেকে। আমাদের দেহের সব অঙ্গ-প্রতঙ্গ যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত, ওই উপাদানগুলো প্রতিনিয়িত কিছু না কিছু পরিবর্তিত হয়। একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে- হাড়ে যে ক্যালসিয়াম আছে তা থেকে প্রতিদিন ৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম বের হয়ে আসে এবং খাবার থেকে ঐ ক্যালসিয়াম হাড়ে যায়। এভাবে অন্যান্য অনেক উপাদান দেহ থেকে বেরিয়ে যায় এবং খাবার থেকে ওইসব উপাদান এসে সে স্থান দখল করে। তাহলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, খাবারের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যাবতীয় কাজকর্মের জন্যই খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য যে খাবার দরকার তা আমরা খাচ্ছি কি-না? না কি রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো বিষ খাচ্ছি?
কৃষি তথ্য সার্ভিসের এক প্রতবেদন মতেঃ পৃথিবীতে বহুরোগ সৃষ্টির জন্য খাদ্য উপাদান দায়ী। বাংলাদেশে অধিকাংশ খাদ্যসামগ্রী অনিরাপদ বা বিভিন্ন মাত্রায় ভেজালযুক্ত। এ সমস্যা খাদ্য প্রস্তুত করা থেকে ভক্ষণ পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বিদ্যমান। খাদ্য প্রস্তুতকারক, প্রক্রিয়াজাতকারক, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুডের দোকান প্রত্যেকেই এ ভেজালীকরণ প্রক্রিয়ায় জড়িত। এ প্রক্রিয়া জনস্বার্থের জন্য মারাত্মক হুমকি, যা নানাবিধ রোগব্যাধীর জন্য দায়ী। বিগত কয়েক দশকে এদেশে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ১৯৮০ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য ইনস্টিটিউটের একটি জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের শতকরা ৬৩ ভাগ অপুষ্টির জন্য অপার্যপ্ত খাদ্যাভ্যাস ও ভেজাল খাদ্য গ্রহণ দায়ী। ২০০৩ সনে একটি গবেষণায় দেখা যায় পূর্ববতী দশকের প্রায় ৫০% খাদ্য সামগ্রীই ভেজালপূর্ণ যা ঢাকার জনস্বাস্থ্য বিভাগ (IPH) দ্বারা পরিচালিত ছিল। একইভাবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ২০০১-২০০৯ সন পর্যন্ত গৃহীত প্রায় অর্ধেকের বেশি খাদ্যসামগ্রীই ভেজালপূর্ণ। এ সরকারি পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, বিগত ১০ বছরে এদেশে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভেজাল খাদ্যে নানাবিধ প্রাণঘাতী প্রভাব রয়েছে। জাতীয় টাস্কফোর্স NTFS-এর মতে, ভেজাল খাদ্যসামগ্রী প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগসহ ডায়রিয়া ও অপুষ্টির জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত, যা শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী। বেশিরভাগ ভেজাল খাদ্য কঠিন ও জটিল রোগের জন্য দায়ী। সম্প্রতি সময়ে এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার শিশু মৃত্যুর এক ভয়ানক চিত্র তুলে ধরেছে যাতে প্রতি ১৯ জন শিশুর অন্তত ১ জন শিশু ৫ বছরের পূবেই মৃত্যুবরণ করে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থ্যা সমূহকে যে কোনো মূল্যে আরো শক্তিশালী ও বেগবান হতে হবে।
ছবিঃ সংগ্রহীত