নিজস্ব প্রতিবেদক:
জরুরী চিকিৎসায় স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়গনিস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে গেলেই রোগীকে অনেক সময় ইনজেকশন দেয়া হয়। এসময় রোগীর স্বজনরা ইনজেকশনের মেয়াদ আছে কি না তা যাচাই করার বা দেখার সময় এবং সুযোগ থাকে না। চিকিৎসকদের উপর আস্থা রেখেই রোগী সেবা গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু জরুরী মুহুর্তে রোগীকে যে ইনজেকশন দেয়া হচ্ছে তা যদি হয় মেয়াদ উত্তীর্ণ, তাহলে ভাবুন তো কেমন হবে?
পাশাপাশি আপনি রক্ত পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়গনিস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে রক্তের স্যাম্পল দিয়েছেন। কিন্তু ল্যাবে রক্ত পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত রি-এজেন্ট টি যদি থাকে মেয়াদ উত্তীর্ণ, তাহলে সেই পরীক্ষায় আপনি কতটুকু আস্থা রাখবেন?
রাজধানীর নয়াবাজারের নওয়াব ইউসুফ রোডের মেডিপ্যাথ ডি. ল্যাব এন্ড হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশন, বিভিন্ন কোম্পানি ওষুধ এবং ল্যাবে রক্ত পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত রি-এজেন্ট সবই মেয়াদউত্তীর্ণ পাওয়া যায়।
রবিবার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বাবুবাজার, নয়াবাজার এলাকায় অভিযানে যায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় মেডিপ্যাথ ডি. ল্যাব এন্ড হাসপাতালের ল্যাবে অভিযান চালায় কর্মকর্তারা। ল্যাবের ফ্রিজে রাখা বিভিন্ন পরীক্ষায় ব্যবহৃত রি-এজেন্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ পাওয়া যায়। যা পরীক্ষায় ব্যবহার করা ক্ষতিকর। এছাড়া হাসপাতালটির নিজস্ব ফার্মেসিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন এবং ওষুধ পাওয়া যায়।
মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রিমিজেস (Premesis) ইনজেকশন পাওয়া যায়। যা নিন্মোক্ত উপসর্গে নির্দেশিত-
– উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এমিটোজেনিক ক্যান্সার কেমোথেরাপীর ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব ও বমি প্রতিরোধে।
– অস্ত্রপাচার পরবর্তী বমি বমি ভাব ও বমি প্রতিরোধে।
– রেডিওথেরাপীর ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব ও বমি প্রতিরোধে।
বিভিন্ন পরীক্ষায় ব্যবহৃত যেসব মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পাওয়া যায়:
বায়োমিড (Biomed), কোয়ালিটি কন্ট্রোল (Quality control)
মেয়াদ উত্তীর্ণ অমিটিড ২০ ক্যাপসুল পাওয়া যায়। যা নিম্নোক্ত উপসর্দে নির্দেশিত-
-গ্যাস্টিক আলসার ও ডিওডেনাল আলসার।
– নন-স্টেরয়ডাল প্রদাহবিরোধী ওষুধ ব্যবহারজনিত গ্যাস্ট্রিক আলসার ও ডিওডেনাল আলসার।
এসব অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাৎক্ষণিক সেই টাকা আদায় করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারায় বলা রয়েছে:
মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এর আগে `আদি লাল চাঁন গ্র্যান্ড সন্স’ নামের একটি মিষ্টান্ন ভান্ডারে অভিযান চালিয়ে ফ্রিজে পঁচা/বাসী খাবার পাওয়ায় অধিদপ্তর আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হলে অনুর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
পরে `সকাল সন্ধ্যা হোটেলে’ও অভিযান চালানো হয়। সেখানে নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং খাবারের নিম্নমান থাকায় ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।
এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার পরিদর্শন করে চাল, চিনি,পেঁয়াজ, কাঁচা সবজি, পোল্ট্রি, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য, পণ্য ক্রয়-বিক্রয় রসিদ, পণ্যের মূল্য তালিকা পরিবীক্ষণ করা হয়। এসময় বাজারে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রয়, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ সংরক্ষণ, মূল্য তালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের হ্যান্ডমাইকে সতর্ক করা হয়।
ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের ৩টি টিম কর্তৃক অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস, ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রোজিনা সুলতানা।
এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানান, নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাপ্তাহিক ছুটিরদিনসহ নিয়মিতভাবে সারাদেশে অধিদপ্তরের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। বাজারে কোন প্রকার অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে অসাধু ব্যবসায়ীদের তিনি সতর্ক করেন।
আরইউ