জ্বালানি অধিকার নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু নীতিমালার বিকল্প নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘সুষ্ঠু জ্বালানি নীতির মাধ্যমে জ্বালানি খাতে নাগরিকের অধিকার এখন সময়ের দাবি। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপান্তরে জ্বালানির অধিকার মৌলিক অধিকারের রূপ পেয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রত্যেক নাগরিকের জ্বালানির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য একটি পরিছন্ন সুষ্ঠু নীতিমালার বিকল্প নেই।’

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজশাহী নগরীর এক অভিযাত কমিউনিটি সেন্টারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রণীত খসড়া জ্বালানি নীতির ওপর নাগরিক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্যাব রাজশাহীর সভাপতি কাজী গিয়াস।

নাগরিক সভায় ক্যাব রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক প্র ভিসি অধ্যাপক চৌধুরী সরওয়ার জাহান সজল, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক,রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংক্ষণ অধিদপ্তরে পরিচালক অপূর্ব অধিকারি রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, দৈনিক সোনার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, অধ্যাপক এসএম আবু বকর, রাজশাহী চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবু বাক্কার আলী, সাংবাদিক নেতা রাশেদ রিপন, প্রফেসর মোশারফ হোসেন, ছাত্র প্রতিনিধি শফিকুল আলম তোতা।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জুলফিকার আলী হায়দার, আল আমিন, লাইট হাউজের প্রজেক্ট ম্যানেজার সুব্রত পাল, সেভ দি ন্যাচারের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ক্যাব সদস্য সুবাস চন্দ্র হেমব্রম।

মতবিনিময় সভায় রিসোর্স পার্সন হিসাবে বক্তব্য রাখেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্ঠা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।

তিনি বলেন, জনগনের পক্ষে জ্বালানি নীতিমালা দাবি হিসাবে আমরা প্রস্তাবনা করছি। এনার্জি ট্রানজিশনে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়কে সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। স্বাধীন দেশে জ্বালানি সম্পদ রক্ষার জন্য সংগ্রাম বিরল। আমরা সেই সম্পদ রক্ষা করতে পারিনি। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলেও দেশীয় বাজারে দাম কমে নাই। বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দাম বেড়ে যায়। ন্যায্য দামের চেয়ে জ্বালানির বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। সরকারকে বিদ্যুতে ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা সেটা থেকে বের হতে পারিনি।

রিসোর্স পার্সন অধ্যাপক মোহাম্মদ তনজিমউদ্দিন খান বলেন, ভোক্তা স্বার্থ রক্ষার সময় সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিস্ক্রয় হয়ে থাকে। মন্ত্রণালয়ে যে লোকগুলোকে রাখা হয়েছে তারা যদি ব্যবসার অংশ হয়, তাহলেই সমস্যা। এ সুযোগে বেসরকারী খাত সুযোগ খুঁজবে। এই জ্বালানি সেক্টর পরিচালনায় সরকারের দর্শন পরিস্কার হওয়া উচিত। জ্বালানি অধিকার সুরক্ষা হলে সব ব্যয় কমে যাবে। জাতীয় আয় বেড়ে যাবে। সামনে জ্বালানি এভাবে দাম বাড়লে আমরা লক্ষ্য থেকে ছিটাকে পড়বো।

শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এই সমস্যার কারণে আজ আমাদের অধিকার লুণ্ঠনের স্বীকার। জ্বালানি ব্যবহারে অধিকার উদ্বুত অধিকার। মৌলিক অধিকারের বিবেচনায় জ্বালানি উপর অধিকার জন্মায়। এই অধিকার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সরকারের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, এলএনজি, সিএনজি খাতে বিশাল বিশাল কোম্পানি গড়ে উঠেছে। সেখানে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি। ভোক্তাদের প্রণীত রাষ্ট্র যে দায়িত্ব সেটার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি নীতির মাধ্যমে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতের সময় এসেছে। আবার নেপালে বাড়ীর ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে সেখান থেকে ন্যাশনাল গ্রিডে দিচ্ছে। এটার দাম আমরা জানি। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ কত টাকা খরচ পড়ছে সেটা আমরা জানি। কিন্তু নিউক্লিয়ার, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের অন্ধকারে রেখেছে। কত কিলোওয়াট কত টাকায় সেটা আমরা জানি না। নেপালে শতভাগ সোলারে চলে গেছে। জামার্নীতে সব পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে একটা সময়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলে যাবে।

সভায় বক্তারা বলেন, ভোক্তার অধিকার, জনগনের সম্পদ লুন্টনের কথা আমরা বলছি। এলএনজি, সিএনজি গ্যাসের কথা বলা হচ্ছে। আধুনিক এই সময়ে জ্বালানি অত্যাবর্শকীয় হয়ে উঠেছে। এটা সরকারের আওতায় থাকতে হবে। রাষ্ট্রের ভোক্তার অধিকার সেটা রাষ্ট্রই ভূলুণ্ঠন করছে। ভোক্তারা যে অধিকার নিশ্চিত করার কথা তারা সেটা ব্যর্থ হচ্ছে। রাষ্ট্রের বাহিনী আমাদের সুরক্ষা দিবে, আজকে তারা ব্যবসা করছে। সবাই ব্যবসা করলে ইকোসিস্টেমের কি হবে?

‘আমাদের উর্বর মাটি, সুর্যের আলো আছে। এখানে বীজ বুনে দিলেই ফসল হয়। আমাদের ছেলে মেয়েরা অনেক উদ্যমী। আমাদের মধ্যে ঐক্যমত আছে। স্বাধীনতার সময় কাউকে ডাকতে হয়নি। একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে কাজ হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানায় বিদ্যুৎ খাতে থাকতে পারে না। ৫০ পয়সায় কাপ্তাই থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে ১৮ টাকায় কেন ব্যক্তি পর্যায় থেকে বিদ্যুৎ কিনছে। ব্যক্তিরা পারলে সরকার পারে না কেন? দুর্নীতি কমানো দরকার। জাতীয় সুপারিশ ব্যতিত জ্বালানির দাম না বাড়ানো দরকার।’

তারা আরও বলেন, বাহাত্তর সালে খাদ্য, আবাসন সহ অনেক সংকট ছিল। সেটা থেকে বেরিয়ে এসেছি আমরা। দেশ শেষ হয়ে যায়নি। অনেক সুচকে পৃথিবীতে আমরা এক নম্বরে আছি। সুশাসন ও গণতন্ত্রের ঘাটতি আছে। গণতন্ত্রের ঘাটতি থাকলে অনেক সমস্যা হয়। এখনো আশাহত হওয়ার কিছু নেই। জাতীয় আয় বাড়ছে, আমরা এগিয়ে যাব সে চেতনা আছে।

ক্যাব উপদেষ্টা প্রকৌ.খাদেমুল ইসলাম ফিকশন বলেন, জ্বালানির ব্যাপারে সুষ্ঠু-সুন্দর নীতিমালা এখনো হয়নি। এখাতে ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ সেটা ঠিক নয়। এলপিজির ক্ষেত্রে আমরা দেখি ৫৪টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৪/৫টি কোম্পানি ব্যবসা করছে। বাকিরা দেউলিয়ার পথে। এখনো এটা নিয়ে কোন নীতিমালা হয়নি। বাস্তব সম্মত প্রস্তাবনা নিয়ে জ্বালানি অধিকার নিশ্চিতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে কাজী গিয়াস বলেন, জ্বালানি নীতি এবং নাগরিক অধিকার দরকার সবাই সেটাতে একমত। জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নের দাবিতে সাবায়কে একযোগে কাজ করতে হবে। এই নীতিমালা কার্যকর করতে হবে।

আরইউ