ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করতে পারবেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এমন বিধান রেখে ‘আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২৪’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই আদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়।
গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, এটা বাণিজ্য নীতিমালা ২০২১-২৪, হয়তো এটা ২০২২-২৫ হয়ে যাবে। এখানে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কিছু কিছু জিনিস ওপেন করা হয়েছে। টিটির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করা সহজ। এক্ষেত্রে অতো কাগজপত্র লাগে না। আগে টিটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ দুই লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা যেত। এটাকে বাড়িয়ে এখন পাঁচ লাখ ডলার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, যারা শিল্পপতি তারা যে কোনো পরিমাণের জিনিস বা ইকুইপমেন্টে ইনভেস্টমেন্ট করতে পারবেন। কেউ রেফ্রিজারেটরের পার্টসের ব্যবসা করে, সে এলসি করে যে কোনো পরিমাণের পণ্য আনতে পারবে। কিন্তু টিটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ডলারের জিনিস আনতে পারবে। টিটি করে জিনিস আনা খুব সহজ। সে জন্য পাঁচ লাখ ডলার পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটা ব্যক্তিগত ব্যবহার বা ইন্ডাস্ট্রির জন্য না, ব্যবসার জন্য।
এ সময় উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ধরেন আমি একটা মোটর পার্টসের দোকান দিলাম, কোনো মেশিনের দোকান দিলাম। আমি বিক্রি করবো, রিটেইলার হিসেবে। তখন আমাকে এই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ফিউমিগেশন পদ্ধতি তুলে দিতে আন্তর্জাতিক মাধ্যম থেকে অনুরোধ জানালেও সরকার তাতে রাজি হয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অনেক অনুরোধ থাকার পরও ফিউমিগেশন তুলে দেওয়ার বিষয়ে আমরা রাজি হইনি।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যেটা আনতে গেলে আমাদের দেশের ক্ষতি হতে পারে, যেমন কৃষি পণ্য আনতে গেলে এমন কোনো এপিডেমিক (মহামারি) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে যে স্ক্যানিং পদ্ধতি আছে…। আমাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গা থেকে বারবার রিকোয়েস্ট করা হচ্ছে রেস্ট্রিকশন (প্রতিবন্ধকতা) তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা রাজি হইনি। কারণ এতে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। যেমন- তুলা। আমেরিকা থেকে যে তুলা আনা হয় আমাদের এখানে ডাবল চেক করা হয়। এটাকে ফিউমিগেশন বলে। ফিউমিগেশন হলো- আমরা যখন কোনো কৃষিপণ্য আনি, তখন ওটার মধ্যে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আছে কি না, এটা আমাদের এখানে এপিডেমিক করবে কি না…।
আমেরিকা আমাদের বারবার রিকোয়েস্ট করেছে ফিউমিগেশন সিস্টেমটা তুলে দিতে। কিন্তু আমাদের এক্সপার্টদের ভিউ, আমেরিকার তুলার মধ্যে এক ধরনের পোকা থাকে। এই পোকা যদি এয়ারে চলে যায় তাহলে আমাদের দেশের শুধু তুলা না অন্য প্ল্যান্টে বা ফলেও মেসিভ নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে, বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
‘সেজন্য আমাদের কাছে বারবার রিকুয়েস্ট করার পরও আমরা…। আমরা তাদের বলেছি তাহলে তোমরা সার্টিফিকেট দিবে এই স্টেটের এই তুলা সম্পূর্ণ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত। সেটা যদি দেয়, তখন দেখা যাবে কী করা যায়।’
তিনি বলেন, আমি নিজে এক সময় হাইব্রিড সিড (বীজ) নিয়ে এসেছি। এটা আমরা সরাসরি মাঠে দিতে পারিনি। এটা আমাদের দিতে হয়েছে এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ সেন্টারে। ওরা একদম ভেরি টাইট কন্ডিশনের মধ্যে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখেছে কী কী আছে, ওরা সার্টিফিকেট দেওয়ার পর বিএডিসি খুবই লিমিটেড ওয়েতে তাদের কন্ট্রাক ফার্মারের মাধ্যমে ডেমোনেসট্রেট প্লট করছে। সব ক্লিয়ার হওয়ার পর এক্সটেনশনের মাধ্যমে আমরা জেনারেল ফার্মারদের দেই।
তিনি আরও বলেন, শুধু তুলা না, এ জাতীয় যে পণ্যই আসবে তাকে কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে। ওখানে একটা ক্রসচেক করে নিতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি বা বিনিময় হ্রাস পাওয়ার কারণ ছাড়া কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলে অথবা আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় পর্যায়ে যদি মূল্য অসমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায় তাহলে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।