নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিভিন্ন উৎসব বা অনুষ্ঠানের খাবারের তালিকার দিকে তাকালে মিষ্টি ও দই এর উপস্থিতি অবশ্যই চোখে পড়বে। এছাড়া বিশেষ আনন্দের দিনেও এসব খাবার না হলে চলেই না। বাহ্যিক চাকচিক্যে ভড়া হোটেল রেস্টুরেন্ট থেকে এসব মিষ্টান্ন কিনলেও ভিতরের দৃশ্য সকলের কাছেই অজানা। অনেক রেস্টুরেন্ট, মিষ্টান্ন ভান্ডার বা দই ঘর গুলোর মিষ্টান্ন তৈরির কারখানার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে পারলেও বেশিরভাগই নোংরা আর অপরিচ্ছন্ন। অনেকেই আবার ঐতিহ্যের আড়ালে নোংরা পরিবেশেই তৈরি করছে দই। যা ক্রেতাদের মাঝে স্বাচ্ছন্দেই বিক্রি করছে। ক্রেতারা সামনের চাকচিক্য দেখে এবং আস্থা রেখে এসব দুই বা মিষ্টান্ন নিয়মিতই কিনছে।
মিষ্টান্ন জগতের একটি ঐতিহ্যবাহী নাম আদি মরণ চাঁদ ঘোষ এণ্ড সন্স। নামে ঐতিহ্য থাকলে প্রতিষ্ঠানটির কাজে এবং কারখানায় ডুকে ঐতিহ্য খুঁজে পায়নি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
বুধবার পুরান ঢাকার নবাবপুরের রথখোলা রোডে অবস্থিত আদি মরণ চাঁদ ঘোষ এণ্ড সন্স’র শাখায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির বাহিরে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মিষ্টান্ন। পাশেই বসে এসব মিষ্টান্ন খাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব চাকচিক্যের দিকে নজর না দিয়ে চলে যান প্রতিষ্ঠানটির অন্দরমহলে অর্থাৎ কারখানায়। তবে সেখানে ঢুকে যা দেখা গেল তাতে আদি মরণ চাঁদ ঘোষ এণ্ড সন্স’র ঐতিহ্যে আস্থা রাখা যায়না।
কারখানায় ঢুকেই চোখে পড়লো দই এর উপর স্বাধীনভাবে ঘুরছে তেলাপোকা। তাদের চলাফেরা দেখে মনেই হতে পারে এটি হয়তো তেলাপোকারই জগত। বড়-ছোট বিভিন্ন সাইজের তেলাপোকা ঘুরছে মিষ্টান্ন বানানোর জন্য রাখা ছানার উপর এবং মেঝেতে।
কারখানায় বড় বড় চুলায় জ্বাল হচ্ছে দুধ, যা দিয়ে তৈরি হবে মিষ্টান্ন। মেঝেতে সারি সারি করে রাখা হয়েছে দই’র হাড়ি। তবে কোন হাড়িতেই নেই ঢাকনা। মাছিও ইচ্ছে মত বসছে আর উঠছে দই’র উপর। যে মেঝেতে দই’র হাড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে তার অবস্থা খুবই খারাপ। স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে। একটু হাটাহাটি করলেই কাঁদাকাঁদা হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কোন পণ্যের গায়েই উৎপাদনের তারিখ বা মেয়াদ উত্তীর্ণের কোন চিহ্ন নেই। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) হালনাগাত বৈধ কোন কাগজপত্রও নেই।
পরে এসব নানাবিধ অপরাধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হলে অনুর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এর আগে নবাবপুর রোডের গোলাপ শাহ বেকারীতে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে কেক, বিস্কুট সহ কয়েক প্রকার বেকারী আইটেম তৈরি করা হচ্ছে। বেকারীটির বিএসটিআই’র কোন অনুমোদন নেই। কোন পণ্যের মোড়ক নেই। এছাড়া পণ্যের গায়ে উৎপাদনের তারিখ বা মেয়াদ উত্তীর্ণের কোন চিহ্ন নেই।
এই প্রতিষ্ঠানটিকেও ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।
এছাড়া কুসুম বেকারীতে অভিযান চালিয়ে মোড়কজাত ছাড়া পণ্য বিক্রি এবং মেয়াদ না থাকার অপরাধে অধিদপ্তরের ৩৭ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নগদে সেই টাকা আদায় করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৩৭ ধারায় বলা রয়েছে:
পণ্যের মোড়ক, ইত্যাদি ব্যবহার না করা: কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন সহকারি পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল। তার সঙ্গে ছিলেন অধিদপ্তরের নবযোগদানকৃত সহকারী পরিচালকগণ।
অভিযান শেষে মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই অভিযান অব্যহত থাকবে। ঐতিহ্যের আড়ালে আদি মরণ চাঁদ ঘোষ এণ্ড সন্স যেভাবে খাবার তৈরি করছে তা আইনত দণ্ডনিয় অপরাধ। যেকোন খাদ্য তৈরির কারখানা অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খাবারের গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে। আইন মেনে খাদ্য তৈরি করতে হবে। আজ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে এবং তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে একই ভুল করলে এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় শাস্তির আওতায় আনা হবে।
আরইউ