জ্বালানি তেলের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ অবস্থায় দাম কমাতে নিজেদের মজুত থেকে তেল ধার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, তাদের মজুত থেকে আগামী কয়েক মাসে পাঁচ কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়া হবে।
যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে জ্বালানি সংকট দেখা দিলে আপৎকালীন চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশ তেলের মজুত করে রাখে, যা ‘স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ’ বা এসপিআর নামে পরিচিত। এই এসপিআর থেকেই তেল কোম্পানিগুলোর কাছে অপরিশোধিত তেল বিক্রি ও ধার দেবে যুক্তরাষ্ট্র। পরে ধার নেওয়া তেল সুদসহ ফেরত দিতে হবে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বাইডেন প্রশাসনের অনুরোধে একই কাজ করতে রাজি হয়েছে চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো।
এর আগে দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেক ও তার সহযোগী দেশগুলোকে (যেমন- রাশিয়া) উৎপাদন বাড়াতে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাতে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। এরপরেই যার যার মজুত থেকে তেল বাজারে ছাড়তে মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রশাসন এর আগে তিনবার এসপিআর থেকে তেল বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল। প্রথমবার ১৯৯১ সালে উপসাগীয় যুদ্ধের সময়, এরপর ২০০৫ সালে হ্যারিকেন ক্যাটরিনার পর এবং সবশেষ ২০১১ সালে ওপেক সদস্য লিবিয়ায় যুদ্ধ চলার সময় এসপিআর থেকে তেল নেওয়া হয়েছিল। তবে এবারই প্রথম বিশ্বের বৃহত্তম তেল ভোক্তাদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে এসপিআর ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র আগামী কয়েক মাসে ৩ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল তেল বিভিন্ন কোম্পানিকে ধার দেবে। একই সঙ্গে কংগ্রেসের অনুমোদন দেওয়া ১ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি চলবে।
এ পর্যন্ত মার্কিন মিত্রদের মধ্যে ভারত জানিয়েছে, তারা এসপিআর থেকে ৫০ লাখ ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়বে। যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, তারা স্বেচ্ছায় ১৫ লাখ ব্যারেল বাজারে ছাড়ছে।
দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মিত্রদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তাদের এসপিআর ব্যবহারের পরিমাণ ও দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হবে। জাপান তাদের মজুত তেল ব্যবহার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বুধবার জানাবে বলে জানিয়েছে। আর চীন সবার আগেই মজুত তেল বাজারে ছাড়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি তেল ভোক্তা দেশ একসঙ্গে এসপিআর ব্যবহারে রাজি হওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত মাসে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম উঠেছিল প্রতি ব্যারেল ৮৬ ডলারে, যা বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) এর দাম অনেকটা কমে বিক্রি হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারেরও নিচে।