ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ। পুরোনো বছরের সব জরাজীর্ণতাকে বিদায় জানিয়ে নতুনের আহ্বানে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে বরণ করবে জাতি। আগামী বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উপলক্ষে নগরবাসীর সার্বিক নিরাপত্তাসহ সুশঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকাসমূহ এ বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থার আওতায় থাকবে।
বর্ষবরণের উৎসবের এ দিনটি ঘিরে রাজধানীর রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ, চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাবি ক্যাম্পাস, বাংলা একাডেমি, দোয়েল চত্বর, শিশু একাডেমি, হাইকোর্টসহ আশেপাশের এলাকায় জনসমাগমকে কেন্দ্র করে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এসব তথ্য জানান।
বৈশাখের প্রথম দিন রাজধানীর যেসব রাস্তায় বন্ধ থাকবে যান চলাচল-
১. বাংলামটর-হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর
২. হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-কাকরাইল-মৎস ভবন-কদম ফোয়ারা
৩. মৎসভবন-শাহবাগ-কাঁটাবন
৪. পলাশী-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট ক্রসিং
৫. বকশী বাজার-শহীদ মিনার-টিএসসি
৬. শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর
৭. নীলক্ষেত-টিএসসি
যান চলাচলে বিকল্প সড়কসমূহ-
১. মিরপুর রোড-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নিউমার্কেট-আজিমপুর-বকশীবাজার-চাঁনখারপুল-গুলিস্তান
২. রাসেল স্কয়ার-সোনারগাঁও-রেইনবো-মগবাজার-মালিবাগ-রাজমণি-ইউবিএল-গুলিস্তান
৩. মহাখালী-সাতরাস্তা-মগবাজার-রাজমণি-ইউবিএল-গুলিস্তান
৪. ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামটর-মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-খিলগাঁও
৫. ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলামটর-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমণি-নাইটেংগেল-পল্টন-মতিঝিল
৬. কাঁটাবন-হাতিরপুল-বাংলামটর-সোনারগাঁও-ফার্মগেট
৭. কাঁটাবন-হাতিরপুল-বাংলামটর-মগবাজার-কাকরাইল-রাজমণি-ক্রসিং-গুলিস্তান-মতিঝিল
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ বরণ উপলক্ষে রমনা বটমূলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষবরণে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার একটু ভিন্নতা থাকবে। সেটি হলো- মেলায় পান্তা-ইলিশ ও খাবারের দোকান থাকবে না। অনুষ্ঠানটি সীমিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দুপুর ২টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। যেন মানুষ এখান থেকে বের হয়ে খুব সহজে বাড়ি ফিরে ইফতার করতে পারে।
‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকবে। যেখানে প্রত্যেককে তল্লাশির ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এসব এলাকায় সব যানবাহন বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি সোয়াত ও ডিসপোজাল ইউনিট মোতায়েন থাকবে। আজ ও আগামীকাল (মঙ্গল ও বুধবার) পর্যন্ত পুরো এলাকা সার্চ করা হবে। পাশাপাশি পুরো চত্বর সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বিভিন্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। পুরো এলাকাটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াত, ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি রমনার লেকে নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল মোতায়েন থাকবে।
২০০১ সালে রমনার বটমূলে জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সেই হামলাকে মাথায় রেখে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। কেউ আক্রান্ত হলে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কোন রাস্তা দিয়ে কীভাবে নেওয়া হবে সেটার জন্য আলাদা দল প্রস্তুত থাকবে।
ছোট শিশুদের বৈশাখী উৎসবে না আনার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এসব এলাকায় শিশুদের না আনার অনুরোধ করছি, কারণ এসব স্থানে খাবারের কোনো দোকান থাকবে না। মুখোশ পরে আসা যাবে না। উচ্চ শব্দ তৈরি করে এমন বাদ্যযন্ত্র আনা যাবে না।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় মাঝপথে যোগ দেওয়া যাবে না জানিয়ে মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, পহেলা বৈশাখের বিশেষ আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ শোভাযাত্রায় অংশ নিতে হলে আগে চেকিং হয়ে প্রবেশ করতে হবে। মাঝ রাস্তায় চাইলেই কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা কঠোর হতে বাধ্য হবে।