ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: দেশে ভেজাল খাদ্য রোধে নিয়মিতই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। রেস্তোরাঁ, বেকারি কিংবা সাধারণ খাবারের দোকান; প্রতিষ্ঠান ছোট-বড় যেমনই হোক- ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেই মেলে ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্য, করা হয় জেল-জরিমানা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত ও বিক্রয়ে অনিয়ম মেলে ভুরি ভুরি।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) তথ্য বলছে এমনটা। সংস্থাটি গত অর্থবছরে (২০২০-২১) সারাদেশে এক হাজার ৫৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এর মধ্যে কখনো একটি, কখনো একাধিক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়েছে। তাতে দুই হাজার ৮৭০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দুই হাজার ১৯৯ জনকে দণ্ড-অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৩১ জনকে।
গত অর্থবছরে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পরিচালিত এক হাজার ৫৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মধ্যে রাজধানীতে হয় ১৬২টি। তাতে ১৫৭টি মামলা হয় এবং সবাইকে জরিমানা করা হয়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংস্থাটি ১৩৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় নানা অপরাধে ১৩৭টি মামলা করে। তার আগের বছরে ৫৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে মামলা হয় ৬৯টি। অর্থাৎ এসব পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেই মেলে নানা অপরাধের প্রমাণ।
অন্যদিকে দেশে অনিরাপদ খাদ্যের একটি শঙ্কাজনক তথ্য দিচ্ছে বিএফএসএ’র ল্যাব নেটওয়ার্ক দপ্তর। তাদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরের (২০২০-২১) সারাদেশের বিভিন্ন বাজার থেকে মোট দুই হাজার ৭৬০টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ৩৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৬৮টি খাদ্যপণ্য পাওয়া যায় মানহীন।
এর আগের বছরও দুই হাজার ১১৯টি নমুনা সংগ্রহ করে এক হাজার ৭৩১টি পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৯৬টি পণ্য পাওয়া যায় মানহীন। এই দুই তথ্যের হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাজারে মানহীন পণ্যের সংখ্যা বেড়েছে।
এসব বিষয়ে বিএফএসএ চেয়ারম্যান আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, মানহীন খাদ্য তৈরির প্রবণতা আমাদের মধ্যে বেশি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে নানা উপায়ে এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে। জেল-জরিমানা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে এ নিম্নমানের ভেজাল খাদ্য এখন চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ভেজাল খাদ্যের কারণে প্রতিবছর দেশে কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ ক্যানসারে, দুই লাখ কিডনি ও দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিচ্ছে।
অন্যদিকে খাদ্য নিরাপদতায় বিএফএসএর পাশাপাশি গত তিন বছরে বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও র্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আট হাজার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বলে তথ্য দিচ্ছে পবা। এসব অভিযানে ভেজালের প্রমাণ পাওয়ায় ২৫ হাজার মামলা ও শতকোটি টাকা জরিমানা আদায় করলেও দেশে ভেজালের কারবারে কোনো হেরফের হচ্ছে না।
তবে এত বেশি জরিমানা হওয়ার কারণ হিসেবে সরকারি কর্তৃপক্ষের কিছু দুর্বলতা রয়েছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীন। তিনি বলেন, এত ছোটখাট বিষয়ে জরিমানা করা হচ্ছে যে সেগুলোর কারণ খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। বলতে গেলে কথায় কথায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
তিনি বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযান নিয়ে এত বেশি নেতিবাচক প্রচারণা হয়, যার কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। ফ্রিজে পড়ে থাকা কোনো খাদ্য উপকরণ একটু দুর্বল হতেই পারে, কিন্তু সেটার জন্য জরিমানা, কর্মীদের স্বাস্থ্যসনদের জন্য জরিমানা, এসব বিষয় যেন প্রহসন। নানা অজুহাতে প্রতিষ্ঠানগুলো পড়ছে জরিমানার মুখে, নষ্ট হচ্ছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম।