নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স নিয়ে ওষুধ বিক্রির সঙ্গে খাদ্যপণ্য, কসমেটিক এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্রসাধনী বিক্রি করছিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল মার্কেটের জহুরা ফার্মা। যা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইনে দণ্ডণীয় অপরাধ। এই অপরাধে ফার্মেসি কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
রবিবার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুরের টাউন হলে বাজার তদারকিতে যান ভোক্তা অধিদপ্তরের একটি টিম। এই টিমের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচাকল ফাহমিনা আক্তার এবং নবযোগদানকৃত সহকারী পরিচালকগণ।
অভিযানের শুরুতেই টাউন হল বাজারের ফার্মেসিগুলোর দিকে যান কর্মকর্তারা। এর পূর্বেও এই বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। এই বাজারে বেশকিছু ফার্মেসি রয়েছে। প্রত্যেক ফার্মেসিতে কর্মকর্তারা ভাগ ভাগ হয়ে খুঁজতে থাকেন মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সহ নানা অসঙ্গতি। জহুরা ফার্মায় মেয়দ উত্তীর্ণ ওষুধ না পেলেও ফার্মেসিটি ড্রাগ লাইসেন্স নিয়ে খাদ্যপণ্য, কসমেটিক এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্রসাধনী বিক্রি করছিল। সেই অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে অধিদপ্তরের ৪৫ ধারায় দোষী স্বাব্যস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে:
প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা: প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করার অপরাধে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪০ অনুসারে কারও ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে প্রথমেই কমপক্ষে ছয় মাসের ফার্মাসিস্ট কোর্স করে সনদ সংগ্রহ করতে হবে। পরে সংশ্নিষ্ট ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে ফার্মাসিস্ট সনদ জমা দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ৪ নম্বরের ১৩ নম্বর ধারায় ‘ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ’ শিরোনামে উল্লেখ আছে, কোনো খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভুক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধান ব্যতিরেকে কোনো ড্রাগ বিক্রি করতে পারবে না।
এই বাজারে ওহী ফার্মাতেও অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এই দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া যায়।
যেসব মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া যায়:
অক্সেকোন-এম: রিফ্লাক্স ডিজিজ, পাকস্থলীর আলসার, পাকাশয়ের প্রদাহপূর্ণ রোগ, প্রায়োগিক এঁড়ে, রক্তে ম্যাগনেসিয়াম কম পরিমাণ এবং অন্যান্য অবস্থার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয়।
ন্যাপ্রোসিন প্লাস: অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েট আর্থ্রাইটিস অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস এর লক্ষণ ও উপসর্গ নিরসনে এবং যে সকল রোগীর এন.এস.এ.আই.ডি সেবন সংশ্লিষ্ট গ্যাস্ট্রিক আলসার হবার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের গ্যাস্ট্রিক আলসার কমানোর ক্ষেত্রে নির্দেশিত।
প্রিমাম: এই ট্যাবলেট জিংক এবং ফলিক এসিডের অভাবজনিত রোগের চিকিৎসায় ও প্রতিরোধে নির্দেশিত।
পরে এই ফার্মাকে অধিদপ্তরের ৩৭ ধারায় দোসী স্বাব্যস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৩৭ ধারায় বলা রয়েছে:
পণ্যের মোড়ক, ইত্যাদি ব্যবহার না করা: কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে দই এর উপর পোকা, খাবারের উপর কাগজ রাখার অপরাধে অধিদপ্তরের ৪৩ ধারায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা রয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হয় তবে অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এসময় মাছ বাজার, চাউলের দোকান সহ ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রয়, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ সংরক্ষণ, মূল্য তালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের হ্যান্ডমাইকে সতর্ক করা হয়।
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের শত্রু নয়। আপনারা আইন মেনে ব্যবসা করলে কোন জরিমানা করা হবে না। জরিমানা কোন সমাধান নয়। আপনারা আইন মেনে ভোক্তাদের সঠিক পণ্য দিন এবং নিজেরাও সঠিকভাবে ব্যবসা করুন। এতে ভোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সরকার সবাই লাভবান হবে।
আরইউ