নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘরে বসে অনলাইনে খাবার অর্ডার করছেন। অল্প সময়ের মধ্যে গরম গরম খাবার পেয়েও যাচ্ছেন। সেই খাবারকে নিরাপদ মনে করে অনেকেই নিয়মিত খাচ্ছেন। অনলাইনে অর্ডার করা খাবার গরম এবং মজাদার। তবে তা কি ফ্রিজে রাখা বাসী খাবার গরম করে আপনার নিকট পাঠানো হচ্ছে কি না তা যাচাই করার হয়তো সুযোগ নেই। অনেকেই নিজের অজান্তেই অনলাইনে অর্ডার করা বাসী খাবার খাচ্ছেন।
অনলাইনে ‘ফুড পান্ডা’র মাধ্যমে খিুচুড়ি বিক্রি করছে ‘মিনাস কিচেন’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট। জিগাতলা বাস স্ট্যান্ডের পাশে গ্রীণ আকশাই প্লাজায় রেস্টুরেন্টটির একটি শাখা রয়েছে। মঙ্গলবার সেই শাখায় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে সেখানে যান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
‘মিনাস কিচেন’ রেস্টুরেন্টটির ভিতরে গিয়ে বোঝার উপায় নেই তারা ফ্রিজের বাসী খাবার বিক্রি করে। ভিতরে ক্রেতাদের জন্য সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বসার আসন। ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির রান্না ঘরে প্রবেশ করেন। রান্না ঘরের প্রতিটি আইটেম দেখতে থাকেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ঢাকা জেলা) সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল। ফ্রিজের মধ্যে রাখা খাবার দেখতে গিয়ে চোখে পড়ে একটি প্লাস্টিকের বক্সের মধ্যে রাখা হয়েছে খিচুড়ি। বক্সটি বের করে দেখা যায় খিচুড়িগুলো বাসী। যা আজকের নয়। পরে রেস্টুরেন্টের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক দাবি করেন এটি গতকালের খিচুড়ি। যা অনলাইনে ফুড পাণ্ডার মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। বিক্রেতা আরও বলেন, অনলাইনে ২৪ ঘণ্টার আগের খিচুড়িও গরম করে বিক্রি করা হয়।
এছাড়া ওয়েস্টর সস, এইচপি সস, ফিস সস, শীসামী ওয়েল মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং পণ্যের মোড়কে কোন প্রকার তারিখ বা আমদানীকারকদের সিল পাওয়া যায়নি।
রান্না ঘরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার রান্না করা হচ্ছে এবং আটার খামিরের উপর রাখা হয়েছে ময়লাযুক্ত বাটি। এসব অপরাধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়। সঙ্গে সকলের উপস্থিতিতে বাসী খিচুড়ি এবং সব সস ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হলে অনুর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
পরে ‘ব্রেড এণ্ড বিয়ন্ড’ নামের একটি বেকারীতে অভিযান চালানো হয়। সেখানে ব্রেডের মোড়কের উপর পণ্যের দাম এবং মেয়াদ স্টিকার আকারে লাগানো হয়েছে। যা যেকোন সময় উঠানো যায়। এবং মেয়াদ শেষ হবার পরেও সেই ব্রেডে পুরাতন স্টিকার তুলে নতুন স্টিকার লাগানোর সম্ভাবনা থাকে। যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
পরে অধিদপ্তরের ৩৭ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নগদে সেই টাকা আদায় করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৩৭ ধারায় বলা রয়েছে:
পণ্যের মোড়ক, ইত্যাদি ব্যবহার না করা: কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
আরইউ