ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: ইউক্রেনে রুশ সেনাদের আগ্রাসন শুরুর পর বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। দফায় দফায় দাম বেড়ে এরইমধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১১ বছরের মধ্যে পৌঁছেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এছাড়া ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং হিটিং অয়েল বিগত ১৪ বছরের মধ্যে উঠেছে সর্বোচ্চ দামে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পর্যালোচনায় দেখা যায়, নতুন বছর ২০২২ সালের শুরু থেকেই জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ে ১৬ শতাংশের বেশি। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বাড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ। আর হিটিং অয়েলের দাম বাড়ে ৫০ শতাংশের ওপরে।
জানুয়ারির মতো ফেব্রুয়ারিতেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এরইমধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পালে জোর হাওয়া লাগে। এর ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাদের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আগাম আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
নিউইয়র্কভিত্তিক ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ওনাডার বিশ্লেষক অ্যাডওয়ার্ড মোয়া ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি বলেছিলেন, ইউক্রেনে আক্রমণ হলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০০ ডলার ছাড়াতে কোনো বাধা থাকবে না। তার মতে, ইউক্রেন পরিস্থিতি সম্পর্কিত খবরাখবরের জন্য তেলের বাজার খুবই অস্থির ও সংবেদনশীল থাকতে পারে।
অ্যাডওয়ার্ড মোয়ার এ বিশ্লেষণ সত্য প্রমাণিত হয় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করতেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারে উঠে আসে। এরপর প্রতিদিন জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এতে এক সপ্তাহে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়ে গেছে। আর ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ২২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং হিটিং অয়েলের দাম ২৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৬৪ ডলার বা ৫ দশমিক শূণ্য ৯ শতাংশ। এতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১১৬ দশমিক ১৮ ডলারে উঠেছে। যা ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অপরদিকে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৬৫ ডলার বা ৫ দশমিক শূণ্য ১ শতাংশ। এতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম উঠেছে ১১৮ দশমিক ৫৯ ডলার। যা ২০১৩ সালের পর বা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আর প্রতি গ্যালন হিটিং অয়েলের দাম দশমিক ২৭ ডলার বা ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৭৭ ডলারে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে উঠেছে হিটিং অয়েল।
এর আগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিলে ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল বিশ্ববাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের মধ্যে পড়ে জ্বালানি তেল। ওইদিন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়।
রেকর্ড এ দরপতনের পরই অবশ্যই তেলের দাম ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এতে রেকর্ড দরপতনের ধকল সামলে ২০২০ সালের বেশিরভাগ সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারের আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
কিন্তু বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে থাকায় এবং লিবিয়ার তেল উত্তোলন বাড়ায় মাঝে বিশ্ববাজারে তেলের বড় দরপতন হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অপরিশোধিত ও ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়।
তবে এ দরপতনের ধকল কাটিয়ে ওই বছরের নভেম্বর থেকে আবার তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। অবশ্য প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে থেকেই ২০২০ সাল শেষ হয়।
গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের শুরুতেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। কয়েক দফা দাম বেড়ে করোনার মধ্যে প্রথমবার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৬০ ডলারে উঠে আসে। এর মাধ্যমে মহামারি শুরু হওয়ার আগের দামে ফিরে যায় তেল।
তবে গত বছরের জুন থেকে তেলের দাম বাড়ার প্রবণতায় নতুন হাওয়া লাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর গত বছরের জুনে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে উঠে আসে। জ্বালানি তেলের এ দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে পরের কয়েক মাস। এতে গত বছরের অক্টোবরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮০ ডলার স্পর্শ করে। যা ব্যারেলপ্রতি দামে ২০১৪ সালের নভেম্বরের পর ছিল সর্বোচ্চ।