ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের অনুমতির নির্দেশনা আবাসন ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বাড়াবে বলে জানিয়েছে এই খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা জানান রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল)।
সিটি করপোরেশনের অনুমোদনের বিষয়টি ভোগান্তির কারণ হিসেবে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘রাজউক ও তার জনবল এই কাজে একটি সক্ষমতা অর্জন করেছে। তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৫০ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ সক্ষমতা। সিটি করপোরেশন নবীনতম বলে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়। তাদের এই মুহূর্তে এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জনবল নেই, কোনো কাঠামো নেই। ফলে ভোগান্তি বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।’
অবকাঠামো নির্মাণে অনুমোদনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন পেলে তাতে দ্বৈত প্রশাসনের সৃষ্টি হবে বলেও মন্তব্য করেন ৯০০ আবাসন ব্যবসায়ীর সংগঠনের এই নেতা। আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আসলেই সাংঘর্ষিক ও অবাঞ্ছিত। আমরা ভোগান্তি কমাতে রিহ্যাব থেকে দীর্ঘদিন ধরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার দাবি জানিয়ে আসছি। তার বদলে সেখানে আরও নতুন তদারকি সংস্থা যুক্ত করা হচ্ছে, যা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বিবেচিত হবে।’
সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা এবং অর্ধশতক বছরের অভিজ্ঞ রাজউককে পরিকল্পিত শহর গঠন ও তদারকির দায়িত্ব অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, ‘২০১৯ সালের আগে ১০ তলার বেশি বহুতল ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র গ্রহণের একটি বিধান প্রচলিত ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে রাজউক কর্তৃক প্ল্যান পাসের প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আগে অনুমোদন দেওয়া ১০ বা ১১টি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পরিবর্তে তিনটি সংস্থা থেকে অনুমোদন নেওয়ার সহজ প্রক্রিয়া প্রচলন করা হয়।’
নতুন সিদ্ধান্তে ভালো কাজ কিছুই হবে না, বরং যারা প্ল্যান জমা দেবেন তাদের হয়রানি বাড়বে বলে মন্তব্য করে সংগঠনটির আরেক সহ-সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘ভবনের প্ল্যান পাস করতে গেলে রাজউকেই মানুষকে হয়রানি পোহাতে হয়। সেখানে নতুন করে অনুমোদনের দায়িত্ব পেলে অবকাঠামো যারা বানাবেন, তাদের অসন্তুষ্টির কারণ হবে সিটি করপোরেশনগুলো। এমনিতেই সিটি করপোরেশনের প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণার শেষ নেই।’
অনুষ্ঠানে রিহ্যাব নেতারা জানান, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ভবন/ অবকাঠামো নির্মাণে রাজউকের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন গ্রহণের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন অনুমোদিত স্থাপনা নিয়মিত মনিটরিং করার ব্যবস্থা রাখবে এবং যদি সিটি করপোরেশন মনে করে রাজউক অনুমোদিত অবকাঠামো শহরের জন্য কল্যাণকর নয় তাহলে সেই অবকাঠামোর কাজ বন্ধ করে দিতে পারবে।
রিহ্যাব নেতারা প্রশ্ন তোলেন, এখানে এই কল্যাণকর বা অকল্যাণকরের মাপকাঠি কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে, তাই তারা শঙ্কিত ও আতঙ্কিত।
আবাসন ব্যবসায়ীরা বলেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা হবে অপরিণামদর্শী। ভিন্ন ভিন্ন তদারকি সংস্থার অনুমোদন শর্তের পারস্পরিক বৈপরীত্যের শিকার হবেন ভবন নির্মাণকারীরা। দুটো প্রশাসনকে একটি কাজের দায়িত্ব দিলে জনগণের ভোগান্তি শুধুই বাড়বে। ফাইল ছোড়াছুড়ির নতুন একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। সমন্বয়হীনতা তৈরি হবে এবং নতুনভাবে প্ল্যান পাস করতে সময় বেশি লাগবে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এমনিতেই অস্বাভাবিকভাবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ছে। ব্যয় বৃদ্ধির নতুন নতুন খাত নাগরিকদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, যা কাম্য নয়।