স্বাস্থ্য, পুষ্টিসেবাপ্রাপ্তি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। সবার জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১-এর মাধ্যমে বর্তমান সরকার নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যও কম নয়। সরকার প্রতি ছয় হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। বর্তমানে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা এবং ৪৫ ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দেয়া হয়। সব কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসবকালীন সেবা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিডওয়াইফ নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশে আধুনিক কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ চালু হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা। যেমনÑবিভাগীয় শহরগুলোয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালে আধুনিক প্রযুক্তি চালু করে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও নির্ভুল ও জনবান্ধব করা হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মান বৃদ্ধি এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবাকে জনবান্ধব করতে অপরিকল্পিত স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অনেক স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। যন্ত্রপাতিও কেনা হয়েছে। কিন্তু তা পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল নেই। এসব স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণে রাষ্ট্রের বিপুল ব্যয় হলেও তা সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসেনি।
আমরা মনে করি, নাগরিকদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অবকাঠামো নির্মাণ ও তা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। নির্মিত নতুন এবং বিদ্যমান অবকাঠামো মেরামত ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নতুন করে যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে সরকারি উদ্যোগ স্বাস্থ্যসেবায় গতি আনবে বলেই বিশ্বাস। এখন অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র নেই। এসব ভবনসর্বস্ব হাসপাতাল কিংবা জনবলসর্বস্ব অবকাঠামো সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসে না। এতে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্ট থাকবে। থাকবে রোগ নির্ণয়সহ অস্ত্রোপচারের সব যন্ত্রপাতিও।
স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনা-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং এর ব্যবহার নিশ্চিতে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দায়িত্বশীল হলে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোও জনহিতকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এখন হাসপাতাল নির্মাণের আগেই দামি যন্ত্রপাতি আনা হবে না। সেগুলো যথাসময়েই আনা হবে। যন্ত্র পরিচালনা করার জন্য জনবল থাকবে, অব্যবহƒত হয়ে পড়ে থাকবে না। সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ হলে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান জনগণকে মানসম্মত ও সাশ্রয়ী সেবা দিতে সক্ষম হবে। স্বাস্থ্য বিভাগে সব ধরনের অব্যবস্থাপনা দূর করলে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত মানের সেবা দেয়ার উপযোগী হয়ে উঠবে এবং তা আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বড় অর্জন হিসেবে গণ্য হবে।
শেয়ার বিজ নিউজ/এস.এইচ