রয়েল বুফে রেস্টুরেন্ট: আভিজাত্যের আড়ালে পঁচা খাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বুফে খাওয়ার কথা উঠলেই বেশিরভাগ খাদ্যপ্রেমী এমন জায়গায় যেতে পছন্দ করবেন যেখানে নানারকম খাবার থাকবে। বুফে মানেই তো অনেক খাবারের সমাহার। বুফেতে সাজানো খাবারগুলো চকচকে এবং পরিচ্ছন্ন অবস্থায় রাখা হলেও হয়তো কেউই খাবারের পিছনের ঘটনার দিকে নজর দেয় না। অর্থাৎ রান্না ঘরের চিত্র, কিভাবে রান্না করা হচ্ছে বা রান্না ঘরের পরিবেশের অবস্থা সম্পর্কে খবর কেউ রাখে না। হয়তো ক্রেতাদের তা রাখার কথাও না। তবে যারা রেস্টেরেন্টে কাজ করেন অথবা কর্তৃপক্ষ তাদের তো সঠিকভাবে নজর রাখার কথা।

রাজধানীর অন্যান্য চাকচিক্যে ভড়া বুফে রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে একটি ‘রয়েল বুফে রেস্টুরেন্ট’। রাজধানীর ধানমন্ডিতে রেস্টুরেন্টটির অবস্থান। যার বাহ্যিক দিকের চাকচিক্য হয়তো আপনাকে আকৃষ্ট করবে। তবে ভুল করেও যদি অন্দরমহল অর্থাৎ রান্না ঘরে ঢুকে পড়েন তাহলে চাকচিক্যের আড়ালে কি চলছে তা হয়তো আপনার নজরে আসবে।

বৃহস্পতিবার রয়েল বুফে রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ঢাকা জেলা) কর্মকর্তারা। রান্না ঘরের চিত্র দেখে অবাক হয়ে যান অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।

ফ্রিজের মধ্যে রাখা হয়েছে পঁচা খাবার। যা ফ্রিজ খোলার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এছাড়াও ফ্রিজের মধ্যে খাবারগুলো এমনভাবে রাখা হয়েছে যা এক খাবার সঙ্গে আরেক খাবারে মিলিয়ে যাচ্ছে। কাঁচা মাংসের সঙ্গে অর্ধ রান্না করা খাবার এক ফ্রিজের মধ্যেই রাখা হয়েছে। ক্রেতাদের খাওয়ানোর জন্য রান্না ঘরের কোনায় রাখা হয়েছে বাসী গ্রিল। খাবারের মধ্যে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে পোড়া তেল। ভোজন রসীকদের খাওয়ানোর জন্য রাখা সসও কাঁচা মাংসের সঙ্গে রাখা হয়েছে। এছাড়া খাবারে ব্যবহারের জন্য বিদেশী পণ্যের মোড়কে আমদানীকারকদের কোন সিল নেই এমনকি মেয়াদের কোন চিহ্নও নেই।

এবার আসি রান্না ঘরের পরিবেশ নিয়ে: রান্না ঘরে ঢুকলে মনে হবে না এটি একটি বুফে রেস্টুরেন্টের রান্না ঘর। চারপাশে অপরিচ্ছন্ন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সব। রান্না ঘরের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে অসুন্তষ্টি প্রকাশ করেন অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা।

পরে এসব নানাবিধ অপরাধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হলে অনুর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এর আগে ধানমন্ডির ‘আড্ডা’ নামের আরেকটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সেখানেও প্রায় একই অবস্থা দেখতে পান তারা।

রেস্টুরেন্টটির রান্না ঘরে গিয়ে দেখা যায়, বাসী খাবার, রান্না করা খাবার এবং খাবার তৈরিতে ব্যবহার হওয়া কাঁচা পণ্য এক ফ্রিজের মধ্যেই রাখা হয়েছে। কাঁচা মাংসের সঙ্গে সস রাখা হয়েছে। খাবারে বিদেশী পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে তবে সেগুলোতে আমদানীকারকদের কোন সিল বা মেয়াদ লেখা নেই। এছাড়া অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার।

এসব অপরাধে এই রেস্টুরেন্ট মালিককেও অধিদপ্তরের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।

অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল। তিনি বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই অভিযান অব্যহত থাকবে। রয়েল বুফে রেস্টুরেন্টটির রান্না ঘর দেখে আমি অবাক হয়েছি। ধানমন্ডির মত একটি অভিযাত এলাকার রেস্টুরেন্টের রান্না ঘর এতোটা খারাপ হবে আমি আশা করিনি। এছাড়া আড্ডা রেস্টুরেন্টটিরও অবস্থা একই রকম। দুটি প্রতিষ্ঠানকেই জরিমানা করা হয়েছে এবং তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে একই ভুল করলে এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আরইউ