জেলে মায়ের সঙ্গী এক বছরের শিশু

বছর দেড়েক আগে ‘বীজ’ নামেরে একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় নিলুফা খাতুন। সেই টাকায় জিনিসপত্র তৈরি করে বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনার কারণে সালাম ও নিলুফা দম্পতির আয় রোজগার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে লকডাউনে মূল পুঁজি শেষ হয়ে যায়। এদিকে এনজিওকর্মীরা নিলুফার কাছ থেকে টাকা আদায়ে মরিয়া।

এ বিষয়ে এনজিও পুলিশে অভিযোগ করলে রোববার রাতে পুলিশ দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রাম থেকে এক বছরের শিশুসন্তানসহ নিলুফাকে গ্রেফতার করেন। সোমবার নিলুফাকে আদালতে হাজির করা হলে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এক বছরের শিশুকন্যা সোনিয়াকেও মায়ের সঙ্গে জেলে যেতে হয়েছে।

সম্প্রতি বীজ এনজিও নিলুফার কাছ থেকে জমা নেওয়া চেক ডিজঅনার করে তা দিয়ে আদালতে মামলা করে। আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

এটা নিয়ে স্থানীয়রা জানান, নিলুফাকে গ্রেফতার করার সময় তার এক বছরের শিশুকন্যা সোনিয়াকে সাথে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সেই শিশুকন্যাকেও কঠিন ঠাণ্ডার মধ্যে মায়ের সঙ্গে রাজশাহী জেলে যেতে হয়েছে।

এ নিয়ে বীজ এনজিওর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মাড়িয়া গ্রামের মানুষ। লোকজন বিষয়টিকে অমানবিক মনে করে দ্রুত নিলুফাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন।  

গ্রেফতার নিলুফা বেগমের স্বামী আব্দুস সালাম জানান, সাংসারিক নানা দায় দেনা মেটাতে আর করোনায় ছোটখাটো কাজ কারবার বন্ধ হওয়ায় ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারেননি। এই ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে কিছু দিন আগে নিলুফার স্বামী সালাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দেড় মাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সম্প্রতি তারা ঋণের টাকা পরিশোধের চেষ্টা করছিলেন দিনমজুরি করে। ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু ঋণের সুদ বাড়তে থাকায় টাকার অংক কমেনি। আর সুদসহ এই টাকা আদায়ে বীজ এনজিও নিলুফাকে গ্রেফতার করায়।

স্থানীয়দের অভিযোগে আরও জানা গেছে, করোনাকালেও সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে ঋণের কিস্তি তুলেছে রাজশাহীতে কার্যরত অধিকাংশ এনজিও।

দুই একটি ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার সরকারি অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশরেই নেই।

তারপরও তারা গ্রামাঞ্চলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আবার ঋণের টাকা আদায়ে তারা চেক ডিজঅনার কৌশলকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।    

এই বীজ নামের এনজিওটির লোকজন এলাকায় ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাংকে হিসাব খুলতে বলেন। হিসাব খোলা হলে চেকে সই নিয়ে নিজেদের কাছে জমা রাখেন। কোনো গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে নিজেদের কাছে রাখা ব্যাংকের চেকে ইচ্ছেমতো অংক বসিয়ে ডিজঅনার করান। তারপর মামলা করেন।

তবে যাতায়াতের টাকা না থাকায় সেই মামলাতে আদালতেও যেতে পারেনি নিলুফা বেগম। ফলে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি হয়। তেমনি একটি মামলায় নিলুফা বেগমকে পুলিশ রোববার রাতে গ্রেফতার করেছে।

এখানে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার বলেন, আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসায় নিলুফাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এখানে পুলিশের কিছু করার ছিল না।

তবে নিলুফার কোলে এক বছরের শিশুসন্তান থাকায় মানবিক কারণে তাকে থানাহাজতে রাখা হয়নি। শিশুসন্তানটিকে একটি গরম কাপড় দেওয়া হয়েছিল। তাদের ডিউটি অফিসারের কক্ষে রাখা হয়েছিল।

এদিকে বীজ এনজিওর দুর্গাপুর উপজেলা ম্যানেজার মাহিরুল ইসলাম এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ঋণ ব্যবসা করার তাদের অনুমোদন আছে কিনা সেটিও জানা যায়নি।

যুগান্তর/নাহিদ/এস.এইচ