ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে এক মাসের বেশি সময় ধরে। এ কারণে রাশিয়াসহ ইউরোপের কিছু দেশের সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যে চলছে স্থবিরতা। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, জাহাজ ভাড়া বাড়ছে দফায় দফায়। শিল্পের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে। এত বাধার পরও দেশের রপ্তাানিতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
মার্চ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ২০ পয়সা) হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা গত বছরের একই সময়েরে তুলনায় ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।
সোমবার (৪ এপ্রিল) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একক মাসের হিসাবে মার্চ মাসের এই আয় দেশের রপ্তানির ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। সে মাসে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার আয় করেন রপ্তানিকারকরা। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে। সে মাসে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেন রপ্তানিকারকরা।
মার্চ মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় হয়েছিল।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) এই ৯ মাসে ৩৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তৈরিপোশাকসহ প্রায় সব খাতেই রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে ৭ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইে থেকে মার্চ, এই ৯ মাসে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এসেছে তৈরিপোশাক খাত থেকে। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পোষাক রপ্তানির এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া জুলাই-মার্চ সময়ে ৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের ওষুধ, ৪৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের হিমায়িত মাছ, ১১৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষিতে ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, হিমায়িত খাদ্যে ১৮ দশমিক ৫৩, চামড়াজাত পণ্যে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, যুদ্ধের কারণে আমাদের রপ্তানি খাতে খুব বেশি একটা প্রভাব পড়বে না, এটা জানা ছিল। কেননা সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের রপ্তানি কম। কোভিড কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে কেনাকাটার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ কারণে রপ্তানিতে গতি ফিরেছে। রপ্তানির এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের হাতে প্রচুর অর্ডার আছে। নতুন করে অনেক কাজের অর্ডারও পাচ্ছি।
এর আগে অর্থনীতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্সেও সুখবর আসে। ফেব্রুয়ারিতে বড় ধসের পর সদ্য বিদায়ী মার্চ মাসে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে রেমিট্যান্স। মার্চ মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ১৮৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার সমান ৮৬ টাকা হিসাবে) ১৫ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা।