নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকায় ১৯৭২ সাল থেকে ওষুধ সেক্টরে ব্যবসা করে যাচ্ছে লাজ ফার্মা। ঢাকা সিটিতে লাজ ফার্মার কয়েক শাখাও রয়েছে। রাজধানীতে যে কয়েকটি ফার্মেসিকে মডেল ফার্মেসি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে লাজ ফার্মা তার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু প্রায় সময়ই স্বনামধন্য এই ফার্মেসির বিরুদ্ধে ওঠে নানা অভিযোগ। এতে প্রতিষ্ঠানটি তার অর্জিত সুনাম খুইয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট মহল।
মঙ্গলবার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে লাজ ফার্মার ফার্মগেট শাখায় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মডেল ফার্মেসি
সেসব ওষুধের দোকানে একজন ওষুধ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ওষুধ বিক্রয় থেকে শুরু করে এর যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখে সেই ওষুধগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত ও প্যাকেটিং করে রোগীকে ওষুধ খাওয়ার নিয়মাবলী বুঝিয়ে দেন।
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে লাজ ফার্মায় এক্সিসেফ নামের মেয়াদ উত্তীর্ণ সিরাপ পাওয়া যায়। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই মাসে। চার মাস শেষ হলেও সেই ওষুধ বিক্রির জন্য তাকে রাখা হয়েছে।
যেসব চিকিৎসায় এক্সিসেফ সিরাপ নির্দেশিত-
-স্ট্রেপটোকক্কাস পায়োজেনস এর দ্বারা সৃষ্ট ফ্যারিংজাইটিস/টনসিলাইটিস।
-স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি, হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি, মোরাক্সেলা ক্যাটারালিস অথবা স্ট্রেপটোকক্কাস পায়োজেনস দ্বারা সৃষ্ট একিউট ব্যাকটেরিয়াল ওটাইটিস মিডিয়া
-শ্বসনতন্ত্রের নিম্নাংশের সংক্রমণ নিউমোনিয়াসহ: স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি, ক্লেবসিয়েলা প্রজাতি, স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্রেপটোকক্কাস পায়োজেনস, ই. কলাই দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণে।
এছাড়া বিদেশী পণ্যের গায়ে আমদানিকারকদের কোন প্রমাণ নেই, পণ্যের গায়ে মূল্য লেখা নেই। সঙ্গে উৎপাদন মেয়াদ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের কোন তারিখ নেই।
এসব অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৩৭ এবং ৫১ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাৎক্ষণিক সেই টাকা আদায় করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৩৭ ধারায় বলা রয়েছে:
পণ্যের মোড়ক, ইত্যাদি ব্যবহার না করা: কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫১ ধারায় বলা রয়েছে:
মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এর আগেও উত্তরার একটি কারাখানার ভুয়া ইউরোপ এবং আমেরিকার ওষুধ পাওয়া যায় লাজ ফার্মায়।
২০১৫ সালে ২৪ ধরনের অনুমোদনহীন দেশি-বিদেশি ওষুধ বিক্রি করার অপরাধে লাজ ফার্মার কলাবাগান শাখাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে র্যা বের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত বছরের মার্চে অভিযান চালিয়ে মাস্ক বিক্রয়ে প্রতারণার দায়ে রাজধানীর ফকিরাপুলে লার্জ ফার্মাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ওই মাসে এলিফ্যান্ট রোডে লাজ ফার্মা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই অভিযোগে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের লাজ ফার্মাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করায় লাজ ফার্মার সাভার শাখাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
করোনাভাইরাসের সংকটে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও ওষুধের বেশি দাম নেওয়াসহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি অভিযানে লাজ ফার্মার বিভিন্ন শাখা অনেকবার জরিমানা দিয়েছে।
এর পর রেজওয়ান ফার্মেসিতে অভিযানে যায় ভোক্তা কর্মকর্তারা। এই ফার্মেসিতেও নিউরো-বি, কলিট্রল নামের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া যায়। এই প্রতিষ্ঠানকে ৫১ ধারায় দোষী সাবস্ত করে মাত্র ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাৎক্ষণিক সেই টাকা আদায় করা হয়।
এছাড়া ফার্মগেট এলাকার কস্তরি ছায়ানীড় হোটেল এন্ড থাই চাইনিজ নামের একটি রেস্টুরেন্টেও অভিযান চালানো হয়। এখানে ফ্রিজে কাঁচা মাংসের সঙ্গে দইও রাখা হয়েছে। পানির ব্যবহৃত পুরাতন বোতলে রাখা হয়েছে বোরহানি। যার উৎপাদনের মেয়াদ এবং উত্তীর্ণের কোন তারিখ নেই। এসব অপরাধে অধিদপ্তর আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হলে অনুর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার পরিদর্শন করে চাল, চিনি,পেঁয়াজ, কাঁচা সবজি, পোল্ট্রি, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য, পণ্য ক্রয়-বিক্রয় রসিদ, পণ্যের মূল্য তালিকা পরিবীক্ষণ করা হয়। এসময় বাজারে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রয়, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ সংরক্ষণ, মূল্য তালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের হ্যান্ডমাইকে সতর্ক করা হয়।
ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের ৩টি টিম কর্তৃক অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী।
এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানান, নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাপ্তাহিক ছুটিরদিনসহ নিয়মিতভাবে সারাদেশে অধিদপ্তরের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। বাজারে কোন প্রকার অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে অসাধু ব্যবসায়ীদের তিনি সতর্ক করেন।
আরইউ