নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিশু খাদ্যে কোনো প্রকার ভেজাল পেলে বিশেষ আইনে মামলা করা হবে বলে ব্যবসায়ীদের হুশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে শিশুখাদ্য আমদানী ও বিক্রয় বিষয়ে শিশুখাদ্য আমদানীকারক, পাইকারি প্রতিষ্ঠান ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাথে মতবিনিময়/সচেতনতামূলক সভায় এই হুশিয়ারি দেন তিনি।
সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় ভেজাল খাই। তা হয়তো সহ্যও করতে পারি। কিন্তু শিশুদের খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খাদ্য কোনোভাবেই ভেজাল, মেয়াদউত্তীর্ণ বিক্রি করা যাবে না। বিক্রি করার সময় অবশ্যই শিশুদের গুড়ো দুধ এবং অন্যান্য খাদ্যের মোড়কে আমদানিকারকদের সিল, উৎপাদন মেয়াদ, উত্তীর্ণের মেয়াদ, পরিমাণ, মূল্য লেখা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পণ্যটি কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে তাও উল্লেখ থাকতে হবে। এছাড়া দেশি কোম্পানির পণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদন মেয়াদ, উত্তীর্ণের মেয়াদ, পরিমাণ, মূল্য লেখা থাকতে হবে।
মতবিনিময় সভায়, কারওয়ান বাজার, মৌলভীবাজার, কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, তাদের প্রতিষ্ঠানে কোন ভেজাল পণ্য, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করেন না। তারা আইন-কানুন মেনে সঠিকভাবে ব্যবসা করছেন। যদি তাদের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোন অন্যায় পায় তবে ভোক্তা অধিকারের আইনে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে।
ব্যবসায়ীদের এমন বক্তব্যের পর ভোক্তা অধিকারের ডিজি বলেন, আপনারা সকলেই ভালো, তাহলে ভেজাল পণ্য কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে কিভাবে? ভোক্তা অধিকারের টিম নিয়মিত বাজারে অভিযান করবে। যদি কোন দোকানে ভেজাল শিশু খাদ্য পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয় এখন থেকে বিশেষ আইনে মামলা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকারের টিম গতকাল গুলশান মার্কেটে অভিযানে গেলে অনেক দোকান বন্ধ করে দেয়। তারা যদি স্বচ্ছ থাকে তাহলে বন্ধ করবে কেন? আর দোকান বন্ধ করে কাকে জিম্মি করছেন?
ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই শিশুদের জিম্মি করা যাবে না বলেও জানান ভোক্তার ডিজি।
এসময় ভোক্তা অধিকারের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ব্যবসায়ীদের ধরপাকর করা ভোক্তা অধিকারের কাজ নয়। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা আইন মেনে ব্যবসা করুক। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগীতা করবো।
তিনি বলেন, ডিজি মহোদয়ের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন খাত ভিক্তিক অভিযান চালানো হচ্ছে। আমরা তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে যেমন অভিযান চালিয়েছি, তেমনি শিশু খাদ্য, রড এবং অন্যান্য খাতেও অভিযান চালাবো। ভোক্তা অধিকার এখন পর্যন্ত জরিমানা করে আসছে। তবে এখন থেকে জরিমানার পাশাপাশি বিশেষ আইনে মামলাও করা হবে। বিশেষ আইনে মামলা হলে ব্যবসায়ীরা সহজে জামিন পাবেন না। এই আইনের মামলা জামিন যোগ্য নয়। তাই ব্যবসায়ীদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। যাতে তারা আইন মেনে ব্যবসা করেন।
মতবিনিময় সভায় কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, অন্য কিছু মেনে নেয়া গেলেও শিশু খাদ্যে ভেজাল কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নিরাপদ শিশু খাদ্য পেতে অবশ্যই মোড়কে ব্যাচ নাম্বার দিতে হবে। মোড়কে শিশু খাদ্য হিসেবে ডিকলারেশন লেখা থাকতে হবে।
আমদানিকারক ছাড়া পণ্য বিক্রির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেসব পণ্য লাগেজে করে আসে, সেসব পণ্য যদি ব্যবসায়ীরা না কিনে তাহলে লাগেজ পার্টিরা সেগুলো বাজারে বিক্রি করতে পারবে না। আর ভোক্তারাও পাবে না। এভাবে চললে এক সময় লাগেজে পণ্য এনে বিক্রির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য সকল ব্যবসায়ীদের একসঙ্গে সহযোগীতা করতে হবে।
আরইউ