নিজস্ব প্রতিবেদক
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কোন ভাবেই সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ১৭ জুন করোনা শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ১৭। এক সপ্তাহে ব্যবধানে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩২।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও একজন। শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৩১৯ জন।
দেশে ৭৫ ভাগ মানুষ টিকা নেওয়ার পরও সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির কারণ জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মাস্ক তো পড়তেই চায় না। হাত ধোয়া ভুলে গেছে। আর শারীরিক দূরত্ব বলতে গেলে নেই। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। মূলত এই কারণেই আবারও সংক্রমণ বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘টিকা নেওয়া মানুষের রক্তে ‘অ্যান্টিবডি’র মাত্রা ৩ থেকে ৬ মাস স্থায়ী হলেও পরে ধীরে ধীরে এটি কমে আসে। তাই টিকা নিয়ে আপনি নিরাপদ সেটি ভাবার কোন কারণ নেই।’
সম্প্রতি দেশে ওমিক্রনের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট (BA.4/5) শনাক্ত হয়েছে। গবেষকরা ধারণা করছেন, প্রচলিত টিকা এ ভ্যারিয়েন্টের বিপরীতে কাজ কম করছে। ফলে সে কারণেও সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে জানান ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী রোগ, মেডিকেলের ভাষায় যেটিকে বলা হয় কোমরবিডি। বিশেষ করে ৬০ ঊর্দ্ধ ব্যক্তি যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বক্ষব্যাধি, ক্যান্সার ও কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কম বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রেও কম সেটিও বলা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের বেশির ভাগ ‘কোমরবিডি’ সমস্যা থাকার কারণে মৃত্যু হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।’
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেছেন, ‘সংক্রমণ বাড়লেও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা খুব কম। ভাইরাসের তীব্রতা কমলেও ‘কোমরবিডি’ রোগীদের ক্ষেত্রে কোভিড ১৯ সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, এমন কি বুস্টার ডোজ পর্যন্ত নিয়েছেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নরমাল কোল্ডের মতো দুই-একদিন সাফার করে আবার সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। ফলে সংক্রমিত মানুষ শনাক্তের বাইরে থাকছে।’
করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অবশ্যই মাস্ক পরুন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। বিশেষ কোন কাজ না থাকলে ঘরেই থাকুন। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাকে-মুখে রুমাল ব্যবহার করুন অথবা মুখ-নাক এমন ভাবে ঢেকে রাখুন, যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে। উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করে নিন। করোনা আক্রান্ত হলে ঘরেই থাকুন।
-এসএম/এমএ