ফ্রোজেন ফুড’ রান্না সহজ করলেও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
ব্যস্ত সময়ে রান্নার ঝামেলা কমাতে অনেকেই সুপার শপ থেকে ফ্রোজেন বা হিমায়িত খাবার কিনে থাকেন। পরোটা, রুটি, সসেজ, মোমো, শিঙাড়া, সমুচা- অনেক কিছুই এখন বাজারে ‘ফ্রোজেন’ অবস্থায় পাওয়া যায়।
তবে এসব হিমায়িত খাবারে অনেক সময় এমনসহ উপাদান ব্যবহার করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
পুষ্টি-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে ‘ফ্রোজেন ফুড’ বা হিমায়িত খাবারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হল।
উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি: যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’য়ের তথ্যানুসারে অর্ধ-তৈরি হিমায়িত ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমে প্রায় ৭০ শতাংশ সোডিয়াম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে। আর একথা সবাই জানেন, সোডিয়ার উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি বাড়ায়। যা থেকে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো মরণব্যাধি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হয়ত ধমনির ক্ষতি হচ্ছে: কিছু হিমায়িত খাবারে যেমন- ‘ফ্রোজেন পিৎজা’ এবং ‘পাই’তে কিছুটা হলেও ক্ষতিকারক ‘হাইড্রোজিনেটেড অয়েল’ ব্যবহার করা হয়। এই তেল হল প্রক্রিয়াজাত করা যাতে ট্রান্স-ফ্যাটের পরিমাণ থাকে অনেক বেশি, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের মতে যেকোনো ‘ফ্রোজেন’ খাবার কেনার আগে পড়ে নেওয়া উচিত সেখানে কোনো ক্ষতিকর উপাদান আছে কি-না।
মাথা-ব্যথা ও গলা ফোলার সমস্যা: হিমায়িত অনেক খাবারেই ‘মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট’ বা এমএসজি ব্যবহার করা হয়। এটা এক ধরনের স্বাদ বর্ধক উপাদান। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এই উপাদান থেকে মাথা-ব্যথা, গলা-ফোলা সমস্যা দেখা দেয়। যা থেকে সারা শরীরে ঘামও দেখা দিতে পারে।
হয়ত পেশির ক্ষতি হচ্ছে: ‘ফ্রোজেন ফুড’ স্বাস্থ্যকর হিসেবে পরিচিতি দেওয়ার জন্য অনেক সময় ক্যালরি কম উল্লেখ করা হয়। তবে দেহের প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালরি গ্রহণ করাও স্বাস্থ্যকর নয়।
ইউ নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট’য়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ কিম্বার্লি গোমার বলেন, “যদি বিপাক প্রক্রিয়ায় সঠিক শক্তি না আসে তবে শরীর পেশি থেকে শক্তি খরচ করা শুরু করে। ফলে ওজন কমা শুরু হয়। অনেকসময় এই কারণে অতিরিক্ত খাওয়াও হয়ে যায়।”
সুখ কম দুঃশ্চিন্তা বেশি: হিমায়িত খাবারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে- এগুলো রান্নার ঝক্কি নেই। আবার অন্যদিকে এটাই সব থেকে বড় অসুবিধা।
ক্লিনিকাল নিউট্রিশন স্টাডি’র এক গবেষণার তথ্যানুসারে, যারা নিজের রান্না করেন তাদের মধ্যে একধরনের ইতিবাচক মনোভাব থাকে এবং নেতিবাচক অনুভূতি কম কাজ করে। ফলে তাদের মধ্যে দুঃশ্চিন্তায় ভোগার সম্ভাবনাও কম। তাই সুখী জীবনের জন্য নিজের রান্না নিজে করার অভ্যাস করাই ভালো। আরও ক্ষতিকর বিষয় আছে: ‘এনভাইরনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’ বা ইডব্লিউজি’য়ের তথ্যানুসারে ফ্রোজেন ফুডের মতো প্রক্রিয়াজ খাবার অন্তত পক্ষে ২ হাজার সিনথেটিক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এসব ব্যবহারের জন্য এফডিএ বা ‘ইউ.এস. ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রিশন’য়ের অনুমতিও নিতে হয় না।
ইডব্লিউজি’র পুষ্টিবিদ ডন আনডুরাগা ‘সিয়েরা ম্যাগাজিন’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা এখনও জানিনা এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো কীরকম হতে পারে। তবে যেকোনো সিনথেটিক জিনিসের একটা ক্ষতিকর প্রভাব থাকে। সেজন্য সাবধান থাকাই মঙ্গল।
ছবিঃ সংগ্রহীত