ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: ডলারের বাজারে যখন অস্থির অবস্থা চলছে, তখন স্বস্তির বার্তা দিল রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। চলতি মে মাসের প্রথম ১৯ দিনে ১৩১ কোটি ২২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১১ হাজার ৪৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২১০ কোটি ডলার বা ১৮ হাজার কোটি টাকা ছড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, মে মাসের ১৯ দিনে আসা ১৩১ কোটি ২২ লাখ ডলারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৭ লাখ ডলার। দুইটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে এক কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার।
চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ব্যাংকের মাধ্যমে ২৩ কোটি ৫ লাখ ডলার এসেছে। এরপর ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ২০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ৮ কোটি ৭৬ লাখ ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে প্রায় ৬ কোটি ডলার এসেছে। সোনালী ব্যাংকে এসেছে ৫ কোটি ডলার।
আলোচিত সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গেল এপ্রিলে ২০০ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১৫ কোটি ডলার বেশি। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৭৩০ কোটি ডলার; বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ এক লাখ ৫১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন ডলারের বাজার চাঙা। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠালে আগের তুলনায় ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাচ্ছেন। সঙ্গে প্রণোদনাও মিলছে। ব্যাংকগুলোও রেমিট্যান্স আনতে উৎসাহ দিচ্ছে। তাই প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে। কারণ সামনে ঈদুল আজহা। অনেকে কোরবানির পশু কেনার জন্য আগেই দেশে অর্থ পাঠিয়ে দেবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লে ডলারের বাজারও স্থিতিশীল হয়ে যাবে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) বাড়তে শুরু করেছে। আমদানি ব্যয় হিসেবে গত ১০ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করায় রিজার্ভ কমে ৪১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল; সেদিনের স্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্সসহ বৈদেশিক মুদ্রার বেশি কিছু আয় যোগ হওয়ায় ২২ মে (রোববার) দুপুর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভের এ অর্থ দিয়ে বর্তমান আমদানির ধারা অনুযায়ী ছয় মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব।