ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: দেশে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক প্রবাসী আয়ের সিংহভাগ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৬৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম ৫ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৮৬০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৪৬৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের ৫৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৯৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, আরব আমিরাত, কাতার, মালয়েশিয়া, ওমান, ইতালি ও বাহরাইন।
তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশের মধ্যে ৬টি হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। চলতি অর্থবছরের ৫ মাসে দেশটি থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২০৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের প্রায় ১৯ শতাংশ।
দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।
প্রবাসী আয়ে তৃতীয় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটি থেকে এসেছে ৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। চতুর্থে থাকা কুয়েত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৭০ কোটি ডলার।
পঞ্চমে আছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। দেশটি থেকে এসেছে ৬৯ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। কাতার থেকে এসেছে ৫৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার, মলয়েশিয়া ৪৪ কোটি ডলার, ওমান থেকে ৪২ কোটি ডলার, ইতালি ৪১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার এবং বাহরাইন থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্য বলছে, সদ্যসমাপ্ত নভেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ (১.৫৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের এ অংক গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বা ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা কম। গত বছরের নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। শুধু তাই নয়, নভেম্বরের রেমিট্যান্সের এ পরিমাণ গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসের দেশে ১৫০ কোটি ডলার সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছিল।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর অবৈধ চ্যানেলগুলোতে অর্থাৎ হুন্ডিতে অর্থ লেনদেনের বেড়েছে। এছাড়া মহামারিতে যে হারে প্রবাসীরা চাকরি হারিয়েছে সেই ভাবে নতুন বৈদেশিক নিয়োগ হয়নি। এসব কারণে প্রবাসীদের আয় কমছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার অংক ছিল ৯২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।