ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা, অতিলোভ বাজার দর বৃদ্ধির কারণ: ক্যাব সভাপতি

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা, অতিলোভ বাজার দর বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মন্তব্য করেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ‘কেবল বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব নয়’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

যৌথ ভাবে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

গোলাম রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এখন কম লাভে সন্তুষ্টি পাচ্ছে না। তাদের অতিমুনাফা, অতিলোভ বাজার দরের বৃদ্ধির কারণ। ক্যাবিনেটের ৬২ শতাংশই ব্যবসায়ী। সংসদ ও সরকারের মধ্যে রাজনীতিবিদদের তুলনায় ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য থাকলেও নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, মনিটরিংয়ে তার প্রতিফলন নেই। দাতাদের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করলেও মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে গেছে। তাদের কঠোর হাতে রুখতে হবে।’

দ্রব্যমূল্যের আগুনে দাহ হওয়া ভোক্তাদের শুধু বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্বস্তি দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

সরকার বলছে সিন্ডিকেট নেই। কিন্তু কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলে সেটা কি সিন্ডিকেট নয়? এমন প্রশ্ন তোলেন গোলাম রহমান।

তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ কীভাবে যে জীবন ধারণ করছে, সেটা কল্পনা করা যাচ্ছে না। মানুষের সঞ্চয় তলানিতে পড়েছে বা শেষ হয়ে গেছে, ধার-কর্জ করছে। মানুষ কষ্টে আছে। সরকারের এই দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ।’

ক্যাবের সভাপতি বলেন, ‘গত অর্থবছরে সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে সরকার ৯৯ হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছে। সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া মানে সেন্ট্রাল ব্যাংকের টাকশাল থেকে টাকা ছাপাইয়া সরকারকে লোন দেওয়া। বাজারে যদি মানি সাপ্লাই বাড়ে তাহলে পণ্য মূল্য বাড়ে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয় বাড়লে ও কর্মসংস্থান তৈরি হলে ভোক্তাদের কষ্ট কম হয়।’

তিনি বলেন, ‘দুই দলের বিতার্কিকদের বক্তব্য শুনে আমি অভিভূত।’

প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত এ বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সচেতন হবে ভোক্তা এবং সুরক্ষিত হবে ভোক্তার অধিকার এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালকগণ, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকগণ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

ছায়া সংসদে সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বিরোধী দল হিসেবে বিষয়ের বিপক্ষে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ চ্যাম্পিয়ন হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক আবুল কাশেম, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় ও সাংবাদিক শাহ আলম খান।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

-এসআর