পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের একটি গ্রাম নয়ামিশ্রিপাড়া। এই গ্রামের মানুষ কখনো ভাবতেই পারেনি তাদের গ্রামে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা দেবেন। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ‘ফ্রেন্ডশিপ’ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
ঢাকা পোষ্টের মাধ্যমে জানা যায়, সংস্থাটি লুক্সেমবার্গ সরকারের সহায়তায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে নির্মাণ করেছে ‘ফ্রেন্ডশিপ হেলথ ক্লিনিক’। এই ক্লিনিকেই স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মাত্র ৬০ টাকায় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন উপকূলীয় এলাকার অসহায়রা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষের পাশাপাশি সচ্ছল লোকজনও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে ছুটে আসছেন ফ্রেন্ডশিপ হেলথ ক্লিনিকে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এখানে সেবা দেওয়া হয়। এটি মূলত একটি আশ্রয়কেন্দ্র। ঝড়, বন্যাসহ দুর্যোগের সময় এলাকাবাসী দুই তলা বিশিষ্ট এ ভবনে আশ্রয় নেন।
৮৫ বছরের বৃদ্ধ ফজলে হাওলাদার পুনামাপাড়া এলাকা থেকে এ ক্লিনিকে এসেছেন বার্ধক্যজনিত নানা রোগের চিকিৎসা নিতে। জ্বর, বুকে ব্যথা, হাত-পা জ্বালাপোড়াসহ তিনি কয়েকটি রোগে ভুগছেন অনেকদিন ধরে। মাত্র ৬০ টাকা ফি দিয়ে তিনি সেবা নিয়েছেন এখান থেকে। তিনটি টেস্ট ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রসহ তার মোট খরচ হয়েছে ৪৪০ টাকা।
তিনি বলেন, কম খরচে চিকিৎসা সেবা নিতে এর আগেও আমি এখানে এসেছি। কলাপাড়া শহরে যাতায়াত করতে ২০০-৩০০ টাকা এমনিতেই খরচ হয়ে যায়। তাই এখান থেকে স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা পেয়ে আমি খুশি।
ফ্রেন্ডশিপ হেলথ ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মিশ্রিপাড়া এলাকার ফারজানা বেগম বলেন, আমি কয়েকদিন ধরে জ্বর আর কোমড় ব্যথায় ভুগছি। এখানে কম খরচে চিকিৎসা হয় এমন খবর পেয়ে এসেছি। সত্যিই এখানে কম খরচে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
চক্ষু রোগের চিকিৎসা নিতে আসা তুলাতলী গ্রামের আব্দুল হাই শিকদার বলেন, আমি এখানে চোখের চিকিৎসা নিতে এসেছি। আগেও এখানকার ওষুধ নিয়ে সুস্থ হয়েছি। টেস্ট করাতেও খরচ কম।
ফ্রেন্ডশিপ হেলথ ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ মো. নাকিব উদ্দিন বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার গরিব-অসহায়সহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে ফ্রেন্ডশিপ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নয়ামিশ্রিপাড়া এলাকায় এ হেলথ ক্লিনিকটি চালু হয়। মেডিসিন, চক্ষু ও ডেন্টাল বিভাগ নিয়ে এ ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী এখান থেকে চিকিৎসাসেবা নেন।
তিনি আরও জানান, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, চর্ম ও যৌন, গাইনিসহ নানা রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে ৫০-৬০ শতাংশ কমে মেডিকেল টেস্টও করা হয়। এছাড়াও সব ধরনের ওষুধ ৭ শতাংশ কম দামে বিক্রি করা হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ১৫৭ জন নারী ও শিশুসহ মোট ১০ হাজার ৪৩ জন রোগী এখান থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।