বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ তরুণ দিন-রাত সবসময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ৮৬ শতাংশ তরুণ করোনাকালে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
টেলিনর গ্রুপ, গ্রামীণফোন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। করোনায় ইন্টারনেটের ব্যবহার ও অনলাইনে হয়রানি (অনলাইন বুলিং) তরুণদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা নিয়েই টেলিনর অনলাইন সেফটি সার্ভে ২০২১ শীর্ষক জরিপটি করা হয়েছে।
চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরব্যাপী বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ড- এ চারটি দেশে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। গ্রামীণফোনের করপোরেট কমিউনিকেশনস ম্যানেজার তাজরিবা খুরশীদ এসব তথ্য জানান।
জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১৫ ভাগ তরুণ প্রধানত সন্ধ্যায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ২ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার সময় ব্যবহার করে। ৮ শতাংশ তরুণ সপ্তাহে অন্তত এক বা একাধিকবার অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপস এবং অনলাইন গেমিং ও ভিডিও গেম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম- এ তিনটি মাধ্যমে সাধারণত তরুণরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে।
মোট তিন হাজার ৯৩০ জন এ জরিপে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ তরুণ বাংলাদেশি। জরিপ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশি তরুণদের ৮৫ শতাংশের মতে, অনলাইন বুলিং একটি মারাত্মক সমস্যা। দেশে বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের যে ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিষয়টির দিকে নজর রাখা এবং সচেতনতা তৈরির গুরুত্বও এখন অনেক বেড়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া সব দেশের ২৯ ভাগ তরুণ জানিয়েছে, কোভিড প্রাদুর্ভাবের আগেই তারা বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ জানিয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর থেকে তারা আরও বেশি অনলাইন বুলিংয়ের শিকার হয়েছে।
জরিপে অনলাইনে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে তরুণরা আরও কী কী ধরনের নির্দেশিকা ও প্রশিক্ষণ চায়- সে বিষয়ে জরিপে দেখা যায় যে, তরুণরা অনলাইনে হয়রানি মোকাবিলায় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস (৫৬ শতাংশ), অনলাইনে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা (৪৬ শতাংশ) এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি (৪৩ শতাংশ) সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী। এছাড়া, অংশগ্রহণকারীরা মেসেজিং অ্যাপে (৪০ শতাংশ) অনলাইন বুলিং থেকে সুরক্ষা পেতে এবং গেমিং ও স্ট্রিমিং ভিডিও গেমসের (৩৭ শতাংশ) সময় অনলাইন বুলিং প্রতিহত করতে আগ্রহী।
চারটি দেশ থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা অনলাইনে বুলিং থামাতে তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে। এর মধ্যে রয়েছে বুলিকারীকে উপেক্ষা করা, সিকিউরিটি সেটিংস পরিবর্তন করা এবং মা-বাবা বা অভিভাবকের সঙ্গে এ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান টেলিনর জরিপে উঠে আসা সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে বলেন, এ সমস্যাগুলো দূর করার জন্য আমরা টেলিনর ও ইউনিসেফের মতো পার্টনারদের সহযোগিতায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনলাইনে নিরাপদ রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন এবং তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। এজন্য তাদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে আমাদের আরও দৃঢ় সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখানো ও প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, জরিপের ফল বলে দিচ্ছে এটি একটি গভীর সমস্যা। আর এ সমস্যা সমাধানে সবাইকে সম্মিলিতভাবে আরও বেশি কাজ করতে হবে। এটি অনেক আশাব্যঞ্জক যে, বাংলাদেশ সরকার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার মতো সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ নিয়েছে।
সাস্টেইনেবিলিটি ফর টেলিনর ইন এশিয়ার ভিপি মনীষা দোগরা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন তরুণদের ইন্টারনেটে সময় কাটানোর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলে অনলাইনে তাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখার উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার প্রয়োজনীয়তাও আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সচেতনতা, অনলাইন বুলিং সম্পর্কে প্রশিক্ষণ সম্পর্কে অংশীজনদের কাজ করা প্রয়োজন।