সরকারকে উদ্যোগী হয়ে পণ্য আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল ও দ্রব্যমূল্য নিম্নমুখী করতে হবে। বাজারের মোট সরবরাহের ২০ শতাংশ যদি সরকারের হাতে থাকে, তাহলে কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে কারসাজি করে বা বাজার অস্থিতিশীল করে মূল্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই মোট সরবরাহের ২০ শতাংশ সরকারের হাতে রাখতে হবে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, এটা ঠিক। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতির কাঠামো রেখে আমরা একটি মিশ্র অর্থনীতি পরিচালনা করতে পারি। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন, আবার প্রয়োজনে সরকারেরও হস্তক্ষেপ করার মতো সক্ষমতা রাখতে হবে। এটি নীতিগতভাবে সরকার পারে, কিন্তু বাস্তবেও প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করার সক্ষমতাও সরকারকে রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এতে করে কোনো ব্যবসায়ী বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করবেন না। অন্যদিকে আমরা যারা ভোক্তার স্বার্থ নিয়ে কাজ করি তাঁদের মতে, যদি আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়েও, মজুদটা তো আজকের দামে কেনা নয়। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেওয়া সংগত নয়। যেহেতু ভোজ্য তেল সাধারণ মানুষসহ সবার একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, সে জন্য শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার অথবা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা যায় কি না, তা সরকারের বিবেচনা করা উচিত। টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির পরিমাণ এখনকার চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বাড়াতে হবে। তাহলে আরো বেশিসংখ্যক সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে।
ব্যবসায়ীদের যুক্তি, বিশ্ববাজারে এখন চালের দাম কমছে, কিন্তু আমি আরো বেশি দামে আমদানি করেছিলাম। কেনা দামের চেয়ে তো কমে বিক্রি করব না। এভাবে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও আমাদের এখানে সমন্বয় হতে অনেক বেশি সময় লাগে। সরকার যদি সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে ও খোলা বাজারে সহনীয় মূল্যে চাল সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে সার্বিক মূল্য পরিস্থিতির ওপর তার প্রভাব পড়বে।
বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের ভালো-মন্দ দেখা সরকারের দায়িত্ব। সে কারণেই সরকারকে প্রয়োজন অনুযায়ী কখনো শুল্ক বাড়াতে হবে, কখনো শুল্ক কমাতে হবে। কখনো ভর্তুকি দিতে হবে, আবার কখনো তা প্রত্যাহারও করতে হবে। আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলি, কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতি এই নয় যে ভোক্তারা নিষ্পেষিত হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতেও সরকারকে নীতিগত সহায়তা দান এবং বাজারে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের সুযোগ রাখতে হবে। পণ্যমূল্য সহনীয় রাখার দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি নজর দিতে হবে নিম্ন-বিত্তদের আয়-রোজগার বৃদ্ধির দিকে। এ জন্য যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আয়-রোজগার আনুপাতিক হারে বাড়লে দ্রব্যমূল্য কিছু বাড়লেও ভোক্তাদের সমস্যা তেমন হয় না। আর করোনার মতো পরিস্থিতিতে আয়-রোজগার না বেড়ে বরং কমে গেলে তো ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠে।
আরেকটি বিষয়, শুল্ক কমানো হলেও পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি ঠিক না হলে তো দাম কমবে না। দাম কমাতে হলে তাই বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে।
গোলাম রহমান : কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি।